সম্প্রীতির উৎসব মহারাসলীলা আজ
বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে মণিপুরী অধ্যুষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।
কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ।
পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় সানা ঠাকুর মন্দিরেও এ উৎসব উদযাপন হচ্ছে।
আগামীকাল বুধবার ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ।
বিজয়া দশমীর পরের রাস পূর্ণিমাকে ঘিরেই এই রাস উৎসব। করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর এ উৎসবে এতো আয়োজন ছিল না। এবার বড় আয়োজন করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব উপলক্ষে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য ২ জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।'
কবি সনাতন হামোম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছরের মতো এবারো মণিপুরিদের পৃথক ২ গ্রামে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরী) সম্প্রদায়ের ১৮০তম ও আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ (মণিপুরী) সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হচ্ছে।'
তিনি জানান, আয়োজনের গোপীনৃত্যে গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধু রাধার বয়স ৫-৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে।
আরও জানান, একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০-২২ জন ১৪-১৫ বছর বয়সী ছেলে অংশ নিয়ে থাকে।
সনাতন হামোম বলেন, 'মহারাসলীলার মূল উপস্থাপনা শুরু হবে দুপুর থেকে "গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য" দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য।'
আজ রাত ১১টায় পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য আগামীকাল ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের মধুর লীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
মনিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পুরো এলাকায় উৎসব চলছে। আমাদের কাছে হেমন্তকাল মানেই রাস পূর্ণিমা বা রাস উৎসব।'
আদমপুর মহারাস উদযাপন কমিটির অন্যতম নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎসব সুন্দরভাবে শেষ করতে চাই।'
রাসোৎসব উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি প্রশিক্ষণ সেন্টার, প্রশাসনিক ভবন, গেস্ট হাউস ও ডরমেটরি ভবনের উদ্বোধন হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
Comments