জন্মদিনের শ্রদ্ধা 

সৈয়দ আবুল মকসুদ : সক্রিয় চিন্তার মানুষ

ঊনিশ শ’ আশির দশকের মাঝামাঝিতে সংবাদ অফিসে, সাহিত্য সম্পাদক আবুল হাসনাতের টেবিলে সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত পাক্ষিক কলাম লেখার জন্য হাসনাত ভাই আমার কাছে প্রস্তাব রেখেছেন, বিষয় বিশ্বসাহিত্য ও শিল্পকলা। অনেক ভেবেচিন্তে একটি লেখা তাকে দিয়েছি, তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন আরো দু’এক লেখা নিয়ে তার কাছে যেতে, যাতে এক-দেড় মাস তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি দু’টি লেখা নিয়ে গিয়েছি এবং মকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তখনও তার নামটা শুধু শুনেছি, দু’এক লেখা পড়েছি, কিন্তু তার মুখোমুখি হইনি। 
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ঊনিশ শ' আশির দশকের মাঝামাঝিতে সংবাদ অফিসে, সাহিত্য সম্পাদক আবুল হাসনাতের টেবিলে সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত পাক্ষিক কলাম লেখার জন্য হাসনাত ভাই আমার কাছে প্রস্তাব রেখেছেন, বিষয় বিশ্বসাহিত্য ও শিল্পকলা। অনেক ভেবেচিন্তে একটি লেখা তাকে দিয়েছি, তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন আরো দু'এক লেখা নিয়ে তার কাছে যেতে, যাতে এক-দেড় মাস তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি দু'টি লেখা নিয়ে গিয়েছি এবং মকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তখনও তার নামটা শুধু শুনেছি, দু'এক লেখা পড়েছি, কিন্তু তার মুখোমুখি হইনি।

তাকে দেখে গম্ভীর ধরণের মানুষ মনে হয়েছিল, যে রকম মানুষের সান্নিধ্য আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য দেয় না। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছেন একজন হাসিখুশি, রসবোধ সম্পন্ন মানুষ, যার বিশ্বাসের  সঙ্গে কাজের কোনো ফারাক নেই, যিনি কিছু নীতি মেনে চলেন, যেগুলো মানবসভ্যতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে, এবং যেগুলোর সঙ্গে নীতিবান ও বিবেকবানরা কখনো আপোষ করেন না। তিনিও করেননি, যার জন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, যদিও তিনি তাতে বিচলিত হননি। 

হাসনাত ভাইয়ের টেবিলে ওই দিনের আধাঘণ্টার আলাপে অবশ্য তার চরিত্রের সব গুণ বা প্রকাশ আমার জানা হয়নি, সেটি সম্ভবও নয়। সেসব জেনেছি এর পরের প্রায় চারটি দশক ধরে। কিন্তু সেদিন যে তার সঙ্গে একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল, তাকে আমি অগ্রজপ্রতিম বিবেচনা করে মকসুদ ভাই বলে ডাকা শুরু করি। তা তার সম্পর্কে তৈরি হওয়া পরিষ্কার কিছু ধারণার জন্য। আমার মনে হয়েছিল তিনি মার্জিত রুচির, সমৃদ্ধ মনীষার এবং যুক্তিবাদী একজন মানুষ, যিনি জীবনের উত্তাপের সঙ্গে আনন্দটুকু গ্রহণ করেন, এবং যিনি মানুষকে সহায়তা দিতে সদা প্রস্তুত। যে দু'টি লেখা আমি সেদিন নিয়ে গিয়েছিলাম, তার একটি যখন হাসনাত ভাই পড়ছেন, অন্যটি মকসুদ ভাই পড়ার জন্য চেয়ে নিলেন। অনেক কুণ্ঠা নিয়ে তাকে লেখাটি দিলাম। তিনি দ্রুতই সেটি পড়লেন, এবং আমার অনুমতি নিয়ে দু'এক জায়গায় বানান ঠিক করে দিলেন। আমাকে বললেন, সাংবাদিক হিসেবে অল্প কথায় বেশি বলার, শুদ্ধ করে লেখার কায়দাটা তাকে রপ্ত করতে হয়েছে। আমার বানান শুদ্ধ করে দেয়াটা ঠিক হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে তার নিশ্চয় একটা খটকা তৈরি হয়েছিল, সেজন্য ওই কথাগুলোর অবতারণা। লেখাটি পড়ার পর তিনি হাসনাত ভাইকে বললেন অবশ্যই ছাপবেন।

মকসুদ ভাইয়ের তাড়া ছিল। তিনি চলে গেলেন। যাবার আগে বললেন, নিশ্চয় দেখা হবে। অবশ্যই। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এরকম একজন মানুষের জন্য যতটা সময় দিতে হয়, দেবো। সময়টা ছিল পাণ্ডুলিপি হাতে লিখে সংবাদপত্রে হোক, প্রকাশকের কাছে হোক, জমা দেবার; ডাকের ওপর ভরসা না করে হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার। সংবাদপত্রের অফিসগুলোতে তাই নিয়মিত যাতায়াত ছিল কবি-সাহিত্যিক, সমাজ বিশ্লেষক এবং নানা বিষয়ের লেখকদের। কলাম লেখা তখন জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে মাত্র, কিন্তু কলামের থেকে বেশি লেখা হত উপ অথবা উত্তর সম্পাদকীয়।

হাসনাত ভাই জানালেন, সেরকম একটি লেখা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং সেটি যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে যাবার পথে হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে এক পেয়ালা চা খেয়ে গেছেন। আমি জানলাম, তিনি একজন কবিও, এবং বিকেলবেলা নামে তার একটি বইও বের হয়েছে। হাসনাত ভাই নিজেও কবি ছিলেন, তিনি যখন স্বভাবসুলভ অল্প কথায় মকসুদ ভাইয়ের কবিতার প্রশংসা করলেন। বললেন, ভালো কবিতা পড়ে দেখতে পারেন, আমি তখন আগ্রহ নিয়ে বইটি তালাশ করতে নামলাম, কিন্তু পেলাম না। হয়তো প্রথম সংস্করণ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় সংকরণ বের হয়নি, অথবা যথাস্থানে আমার খোঁজ করা হয়নি। কিন্তু সংবাদ-এ ছাপা হওয়া তার লেখাটি পড়েছিলাম, যার বিষয়বস্তু, যতদূর মনে পড়ে, ছিল ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষতিকর প্রভাব।

এরপর থেকে মাঝেমাঝেই সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বাংলা একাডেমিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বক্তৃতায়, কলাভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে বা অন্যত্র কোনো আলোচনাসভায়। তার লেখালেখি যত পড়তে শুরু করেছি, তত তার পাণ্ডিত্য, ইতিহাসবোধ, রাজনৈতিক আদর্শবাদ এবং ঔচিত্যবোধ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাকে আবিষ্কার করেছি একজন পরিশ্রমী গবেষক এবং চিন্তাবিদ হিসেবে, যিনি দেশের কঠিন সংকটে এবং গ্রহণকালেও হতাশায় ডুবে যাননি, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাননি। এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল গণমানুষের সামর্থ্যরে ওপর তার বিশ্বাস, সমাজতন্ত্রী রাজনীতিতে তার আস্থা, এবং সময়ের অবশ্যম্ভাবী মোড় ফেরার ব্যাপারে তার আশাবাদ। তার প্রচ্ছন্ন কৌতুকবোধ এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মার্জিত কিন্তু শানিত প্রয়োগ তার যুক্তিতর্কগুলোকে অকাট্য এবং তার সুচিন্তিত অভিমতগুলোকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলত, কিন্তু আমি দেখেছি, তিনি লেখালেখিকে পরিবর্তনের একটি অস্ত্র হিসেবেও দেখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, অন্ধকার যতই গভীর হোক, তা কাটবে, এবং ভবিষ্যৎটা ধরা দেবে জাগ্রত তারুণ্যের হাতে।

২০০৪ সালে সাপ্তাহিক একতায় সৈয়দ আবুল মকসুদের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেটি ছিল বহুলপঠিত। অনেক পরে, ২০২১ সালে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী রাজু আহমেদ সেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। একতায় ছাপা সাক্ষাৎকারটি আমি পড়িনি, তাই রাজু আহমেদের বইটি সে অভাবটা পূরণ করেছে। পড়তে গিয়ে দেখি, শেষ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানাচ্ছেন, দেশ যে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে, দেশ চলে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের কবলে, তখন তরুণরাই পারবে এই অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে। 'আমরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছি তরুণরা সেখানেই সফল হবে,' তিনি বলেছেন।

এই কথা কোনো সান্ত্বনা খোঁজার জন্য নয়, বরং এসবের পেছনে তার একটা প্রত্যয় কাজ করেছে, যা এই অতিমারির শুরুতেও তার বজায় ছিল। গত বছর অক্টোবরে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি বই সম্পাদনার দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছিল। এই বইয়ের সম্ভাব্য লেখকদের মধ্যে আমার নামটিও তিনি লিখে রেখেছিলেন। সেদিনের আলোচনা হয়তো সে বিষয়েই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি একটা ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন। কিছুদিন আগে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত- যাকে এখন এ বইটি সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাকে জানিয়েছেন, আমার নামের পাশে মকসুদ ভাই লিখেছেন, প্রবন্ধ দিতে সম্মত হয়েছেন। যাই হোক, উনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই মকসুদ ভাই বলেছিলেন, নিজেকে নিয়ে তিনি ভাবেন না, ভাবেন গরীব মানুষের কথা।

লকডাউনে রুজি হারানো, ঢাকায় টিকতে না পেরে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষের কী হবে, তা ভেবে তার মনোবেদনা প্রবল হচ্ছিল। তবে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি কোভিড অতিমারি নিয়ে তার একটি বই লেখার পরিকল্পনার  কথা জানালেন। একশ বছর আগের স্প্যানিশ ফ্লুতে ভারতের পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল, এবার কত মারা যাবে, সে সম্পর্কে কারো পরিষ্কার অনুমান নেই, কিন্তু এ দুই মহামারি কি প্রভাব রেখেছে, রেখে যাচ্ছে সমাজে, রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে, এ বিষয়টি তাকে কৌতূহলী করেছে। আমাকে অনুরোধ করলেন, পশ্চিমের এ ধরণের কোনো লেখা সম্পর্কে আমার জানা থাকলে তাকে তা পৌঁছে দিতে। একসময় বলেছিলেন, যতই কঠিন হোক জীবন, মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে, এই ঘুরে দাঁড়ানোটা আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাসে আছে, রাজনৈতিক ইতিহাসে আছে। তবে এই শক্তি খোঁজাটা এবং তা কাজে লাগানোটা বড় একটা কাজ। আমি দেখলাম, রাজু আহমেদের সাক্ষাৎকারের এক জায়গাতে তিনি বলেছেন, 'আমাদের ভাষা আছে। আমাদের নিজস্ব দর্শন, চিন্তা-চেতনা আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সংস্কৃতির একটা অপূর্ব সমন্বয় এখানে ঘটেছে- যা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। . . . কিন্তু [এই সংস্কৃতি] নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে।' এই এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তার কাছে ছিল অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ।

তার ইতিহাস-গবেষণায়, সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং সমকাল নিয়ে তার লেখালেখিতে, তার জনপ্রিয় উত্তর-সম্পাদকীয় ও কলামগুলোতে তিনি এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন; সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে, সময়ের থেকে দু'একদম এগিয়ে থেকে এবং আমাদের স্থিতাবস্থায় প্রাণসঞ্চার করে সামনে চলার ব্যাপারে তার ছিল গভীর প্রত্যয়। তিনি মাওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধা করতেন, ভাসানীর রাজনীতিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতেন, যদিও কোনো দলের রাজনীতি তিনি করেছেন, তেমন কিছু আমি শুনিনি (নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে তাকে খুব কমই দেখেছি), কিন্তু বামপন্থায় তার বিশ্বাস তো তাঁর লেখালেখির সর্বত্রই দৃশ্যমান। বামপন্থীদের যারা ঐক্য নষ্ট করেছেন, হারিয়েছেন, তাদের তিনি অপছন্দ করতেন, কিন্তু বামপন্থার পুনরুত্থান সম্পর্কে তিনি আশাবাদী ছিলেন। একদিন এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বামপন্থার বিকল্প নেই।

সৈয়দ আবুল মকসুদের একটা ছাত্রকাল ছিল, যা তিনি কাটিয়েছেন নিজের গ্রামে, মানিকগঞ্জের এলাচিপুর গ্রামে, ঝিটকা এবং ঢাকাতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন, বাম আদর্শের গোড়াপত্তন সেখানেই হয়। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবনে প্রবেশ করার পর রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না, কিন্তু বামপন্থার আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, পাশাপাশি জয়বাংলা পত্রিকার সঙ্গে প্রতিবেদক হিসেবে যুক্ত হন। আমি কখনো তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে শুনিনি, কারণ তিনি বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। 

একাত্তরে বাঙ্গালি তরুণ সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধে যাবে, এটিই ছিল তার কাছে স্বাভাবিক, যেমন স্বাভাবিক ছিল রাজনীতি করতে হলে গণমুখী, পরিবর্তনকামী, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আদর্শে নিবেদিত রাজনীতিকেই বেছে নিতে হবে, তার এরকম চিন্তা। আমি দেখেছি, তার লেখালেখিতেও তিনি আশা করতেন সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে রাজনীতিবিদ, প্রশাসক অথবা পেশাজীবী, সকলেই কিছু মূল্যবোধ ধারণ করে এগোবেন। তিনি অবশ্যই জানতেন, মূল্যবোধের ঘরে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, কিন্তু মূল্যবোধ মেনে চলার বিষয়টাকে স্বাভাবিক একটি ব্যাপারে পরিণত করার লক্ষ্যে নিয়োজিত ছিল তাঁর অধ্যবসায়। আরেকটি বিষয় ছিল তার মনোযোগের কেন্দ্রে, এবং তা হচ্ছে চারিত্রিক অখণ্ডতা।

এই অখণ্ডতার- যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ইন্টেগ্রিটি- অভাবটি আমাদের দেশে প্রকট হলেও সৈয়দ আবুল মকসুদ হতাশ ছিলেন না। তার বিশ্বাস ছিল এই অভাবটি সৃষ্টি করেছে পুঁজিবাদ এবং আন্তর্জাতিক নানা কর্পোরেট চক্র। পুঁজিবাদকে যদি রুখে দাঁড়ানো যায়, অন্তত এর প্রভাবকে যদি শিক্ষা ও সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিহত করা যায়, মূল্যবোধের চর্চা দিয়ে ঠেকানো যায়, তাহলে অখণ্ডতা উদ্ঘাটন সম্ভব- এবং তা হতে হবে যেমন ব্যক্তিতে, তেমনি প্রতিষ্ঠানে- এবং এর প্রসার ঘটতে থাকলে, কোনো এক সময়, রাজনীতিতেও। তিনি নিজের জীবনে যেসব নীতিতে বিশ্বাস করতেন, সেগুলোর ওপর আঘাত আসলে নিজের মতো করে রুখে দাঁড়াতেন। তার চারিত্রিক অখণ্ডতার দু'টি প্রমাণ তো আমরা সবাই পেয়েছি। অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের ওপর মৌলবাদী হামলার প্রতিবাদে তিনি প্রথম আলো-তে যে কলামটি লিখতেন, তাতে বিএনপি-জামায়াতের মৌলবাদ তোষণের বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করে লিখেছিলেন (তার স্পষ্টবাদিতা, ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে সত্য বলা, কোনো সরকারই পছন্দ করে না। এজন্য রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার তাকে দেয়া হয়নি)।

তখন তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় কর্মরত, যেটি সরকারের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করে। তাকে এই উত্তর-সম্পাদকীয় লেখার জন্য ক্ষমা চাইতে এবং এক ধরণের মুচলেকা দিতে বলা হয়। তিনি সেই হুকুম পালন না করে পদত্যাগ করেন। তিনি একটি উদাহারণ সৃষ্টি করে গেলেন, তা প্রশংসিত হলেও অনুসৃত হয়নি। দ্বিতীয় উদাহরণটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০০৩ সালে পাশ্চাত্য বাহিনীর ইরাক আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁর সত্যাগ্রহ শুরু করা। এর অংশ হিসেবে তিনি পাশ্চাত্যের পোশাক বর্জন করেন, এবং সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরা শুরু করেন। এজন্য প্রথম প্রথম তাকে অনেক জায়গায় বিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছে, কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি।

তার সক্রিয় পেশাজীবন দীর্ঘ না হলেও সংবাদপত্রের সঙ্গে তার সংযোগ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিল। প্রথম আলো তাকে একটি পাটাতন দিয়েছিল, যেখানে থেকে তিনি সারা দেশের (এবং এর অনলাইন সংস্করণ শুরু হলে সারা বিশ্বের) বাংলাদেশীদের সঙ্গে একটা নিয়মিত কথোপকথন চালিয়ে যেতেন। 'সহজিয়া করচা' নামে যে কলামটি তিনি লিখতেন, তা খুবই জনপ্রিয় ছিল। এর কারণ তাঁর সেই স্পষ্টবাদিতা, যুক্তিনিষ্ঠতা এবং সত্যসন্ধ দৃষ্টি। কলামগুলোতে তিনি তাঁর অননুকরণীয় রসবোধের পরিচয় দিতেন। তবে সৈয়দ আবুল মকসুদ কখনো কোনো ব্যক্তিকে অসম্মান করেননি, আক্রমণ করেননি, যদিও আয়রণি এবং বক্রোক্তির সফল ব্যবহারে দুর্জন এবং দুরাচারীকে কুপোকাৎ করতেন, তাদের মুখোশ খুলে দিতেন। তার কলামগুলি ২০০৯ সালে সহজিয়া কড়চা ও ২০১৯ সালে নির্বাচিত সহজিয়া করচা নামে প্রকাশিত হয়।

আমার মতে কলামশিল্প বলে যদি কিছু থাকে, অর্থাৎ রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে, বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও তদন্তের মাধ্যমে, কোনো ঘটনার মূলে গিয়ে তার আনুষঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, সূক্ষ্ম রসবোধের মাধ্যমে সহজগোচর করে উত্তর সম্পাদকীয় ও কলাম লেখার আর্ট বলে আমরা যা বুঝি, তার একজন প্রকৃষ্ট চর্চাকারি ছিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। অথচ তিনি 'সহজিয়া করচা'য় কত সহজে কঠিন কথা বলে ফেলতেন, রাজনীতিকে লক্ষ্যে রেখে তার অসম্পূর্ণতা, তার ভুলভ্রান্তি এবং দ্বিত্বতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদের একটা ব্যক্তিজীবন ছিল, একটা পারিবারিক জীবন ছিল। কিন্তু বামপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস থাকায় তিনি ব্যক্তিজীবনের অনেকটাই ব্যয় করতেন জনহিতির জন্য। অনেক আলোচনা সভায় তিনি যেতেন শ্রোতা হিসেবে, নানান সংগঠনের প্রতিবাদ মিছিল অথবা মানববন্ধনেও তিনি অংশ নিতেন। তার সত্যাগ্রহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ারও তার একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বা সংঘ-অসমর্থিত একজন ব্যক্তি মানুষের এরকম উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশে বেশিদূর যাওয়া হয় না। যতদূর গিয়েছেন, সেটি সম্ভব হয়েছে তার একাগ্রতার জন্য।

তার পারিবারিক জীবনকে তিনি পরিবারের গণ্ডীতেই রাখতেন, তা নিয়ে বাইরে কখনো তাকে কথা বলতে শুনিনি। এমনকি তার ছেলে নাসিফ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হল, তিনি তা আমাকে  জানিয়েছেন অনেক পরে। নাসিফকে নিয়ে তার গর্ব ছিল। আমারও মনে হচ্ছে, বাবার আদর্শগুলো সে ধারণ করেছে। তার সঙ্গে আমার যে হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল, এমনিতেই নাসিফের বিষয়টি তিনি আমাকে বলতে পারতেন। কিন্তু পাছে আমি নাসিফকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে, অন্যদের থেকে আলাদা করে দেখি, সেজন্য তিনি ছেলেকে তার মতোই এগোতে দিয়েছেন। পরে যখন জেনেছি, তাকে আশ্বস্ত করেছি, নাসিফকে আমি তার সব সহপাঠীর মতোই দেখি। তার মৃত্যুর পর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে নাসিফের একটি লেখা বেরিয়েছিল, যার শিরোনাম 'একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ।' একজন সন্তানের কাছে বাবা যখন 'পূর্ণাঙ্গ মানুষ' হিসেবে ধরা দেন, তখন বুঝতে হবে তিনি পারিবারিক জীবনে কতটা সফল।

সৈয়দ আবুল মকসুদের একটা সামাজিক জীবন ছিল, যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তার সহকর্মীরা, বন্ধু এবং তার চিন্তা ও কাজের পথের সহযাত্রীরা। ব্যক্তি ও পারিবারিক অথবা সামাজিক জীবন সবারই থাকে, আলাদা করে সেগুলো নিয়ে বলার কিছু থাকে না। কিন্তু মকসুদ ভাইয়ের এই দিকগুলোতে অল্পস্বল্প আলো ফেলার কারণটা হচ্ছে, সব পর্যায়ে নিজের নীতি ও মূল্যবোধে স্থিত থেকেও তিনি যে তার অন্যসব দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এই বিষয়টি তা স্পষ্ট করে। তাকে দেখেছি এমন সব লোকের সঙ্গেও হাসিমুখে কথা বলছেন, বা তাদের কথা শুনছেন, যারা হয়তো কুড়ি বছরে তিনবার দলবদল করেছেন, বাঁকাচোরা পথে হয়তো স্বচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। এই উদারতা এবং সহনশীলতা তাঁর সহজাত ছিল, এবং তাঁর মুখেই আমি শুনেছি, এই জানাশোনার বিষয়টি তার সমাজবীক্ষণে সহায়ক ছিল।

সৈয়দ আবুল মকসুদ কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন, আমার কখনো জানা হয়নি। কিন্তু তার কাজের একটা এলাকায় তিনি আনন্দ ও তৃপ্তির খোঁজ পেতেন, এবং তা হচ্ছে তার লেখালেখি। লেখকের আনন্দ বেড়ে যায়, যখন বিশাল সংখ্যক পাঠক তার লেখা পড়ে, বই মেলাতে তার বই খুঁজে পেতে সংগ্রহ করে, এবং তাদের সংগ্রহে রাখে। মকসুদ ভাই পাঠকপ্রিয় ছিলেন, এজন্য লেখার মান ধরে রাখতে তিনি একটা চাপ অনুভব করতেন, সে ব্যাপারে যত্নশীলও ছিলেন। অনেক ধরণের লেখালেখি তিনি করেছেন- কবিতা লিখেছেন, ভ্রমণ ও বিদেশে দিনযাপন, সাহিত্য সমালোচনা; লেখক, দার্শনিক ও নানা গুণীমানুষের জীবন ও কর্ম; সংবাদপত্র ও সাময়িকীর ইতিহাস, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের জবানবন্দি এবং রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি নিয়ে বই লিখেছেন; সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মাওলানা ভাসানী ও মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন, এবং লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। এর বেশ কয়েকটি গবেষণাধর্মী বই। আগেই বলেছি, গবেষণার একটা মান তিনি নিজের জন্য তৈরি করে নিয়েছেন, যাতে একদিকে যেমন ছিল আর্কাইভাল ওয়ার্ক অর্থাৎ দলিলপত্র ও নানা উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ- অন্যদিকে ছিল ক্ষেত্র-গবেষণা, সাক্ষাৎকার ও ইতিমধ্যে প্রকাশিত (অথবা সমাপ্ত কিন্তু অপ্রকাশিত) বইপত্র ইত্যাদি। কিন্তু সকল গবেষণার সফল পরিসমাপ্তি নির্ভর করে মৌলিক কিছু সৃষ্টি বা উদ্ঘাটনের ওপর।

যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেশ কিছু বই এখন বাজারে, গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়। কিন্তু সৈয়দ আবুল মকসুদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা যে বইটি প্রথম আলোর ১৪২২ সালের বর্ষসেরা মননশীল বইয়ের পুরস্কার পায়, অনেক দিক থেকেই আলাদা। বইটিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের পাশাপাশি ব্রিটিশ উপনিবেশী আমলে পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজের বঞ্চনা, ক্ষোভ এবং অপ্রাপ্তির বিষয়গুলোও তিনি তুলে ধরেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজের বিকাশে সহায়তা করল, এবং নারীশিক্ষায় ভূমিকা রাখল, সে বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ বইটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এর কেন্দ্রে রাখেনি, বরং এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ইতিহাস, হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত এবং সম্প্রীতি, ঢাকা শহরের বিবর্তন এবং একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে এর বেড়ে ওঠা, দেশবিভাগের আগের অস্থির সময় ও এই সময়ে ঘটে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা- সবই বইটিতে স্থান করে নিয়েছে।

সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, চিন্তা ও চেতনা। প্রথম তিনটি বিষয় নিয়ে তার একটি আলাদা বই আছে, যেমন আছে শেষ দু'টি বিষয় নিয়ে। ব্যক্তিকে তিনি কখনও অনিকেত বা নিরালম্ব ভাবতেন না, যা আধুনিক সাহিত্যে মানুষের একটি প্রধান পরিচয়। মানুষ তখনই গৃহহীন হয়, যখন তার শেকড়ের টানটা থাকে না, সে যাযাবরের জীবন বেছে নেয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, মাটির সঙ্গে, সংস্কৃতির সঙ্গে, জনজীবনের সঙ্গে সংযোগ থাকাটা মানুষের জন্য স্বতঃ:সিদ্ধ একটি বিষয়, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। এজন্য তিনি পশ্চিমের বিভেদকামী নানা শক্তিকে প্রতিহত করার কথা লিখতেন, পণ্যায়নের ঢেউয়ে যাতে ভেসে যেতে না হয়, সেজন্য নাগরিকদের, তরুণদের সতর্ক করে দিতেন। তিনি ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সম্পর্কের ওপর জোর দিতেন। এজন্য 'গণমানুষের' প্রতি তার আস্থা ছিল। গণমানুষ বলতে আসলে অসংখ্য ব্যক্তির সমাবেশ বা সমষ্টিকেই বোঝায়। এবং গণমানুষকে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ ও সামিল করতে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিতে পারে রাজনীতি। তবে সেই রাজনীতি হতে হবে ক্ষমতা দখলের নয়, বরং মানুষের মুক্তির প্রত্যয়ে গতিশীল হওয়া রাজনীতি।

চিন্তার ক্ষেত্রে অবশ্য তিনি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে সর্বাগ্রে রাখতেন। চিন্তাকে মুক্ত হতে হবে, সৃষ্টিশীল হতে হবে, দূরবীক্ষণের শক্তি তার থাকতে হবে, নানা যোগ-বিয়োগের, ব্যাখ্যা-সমীকরণের, বিশ্লেষণ-অনু-বিশ্লেষণের ক্ষমতা তার থাকতে হবে, তিনি তা বিশ্বাস করতেন। আমাদের শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের সেই চিন্তার প্রবাহে স্থাপন করতে পারছে না, এরকম একটা খেদ তার সবসময়ই ছিল। সাংবাদিকতায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি কিছুদিন জার্মানিতে ছিলেন। আমাকে একদিন দু:খ করে বলেছিলেন, জার্মানির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চিন্তার গতিশীলতা, গভীরতা এবং দূরদর্শিতার বিষয়টি শুধু শেখায় না, তাদের ভেতর সেই সক্ষমতাগুলো চিরদিনের জন্য জাগিয়ে দেয়। যার ফলে তাদের চেতনা শানিত হয়, সমকালকে তা ধারণ করতে শেখে, বহু মত ও পথকে সহজে মেনে নিয়েও এক সময় একটা সক্রিয়তার হদিস পেয়ে যায়। চেতনা কথাটার সঙ্গে সক্রিয়তার একটা সংযোগের কথা তিনি তার বইটিতে লিখেছেন। কিন্তু চেতনার সক্রিয়তা এর অন্তর্লীন এক শক্তির নাম, যার অভাবে চেতনার বিকাশ হয় না। অথচ আমরা চেতনাকে শুধুমাত্র একটি জাগিয়ে তোলার মতো বিষয় হিসেবে দেখে বিচার করি, যদিও জাগ্রত থাকলেই যে সক্রিয় থাকা যায়, তা তো নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি একাত্তরের চেতনার কথাটি বলতেন। একাত্তরের চেতনা যদি কারো মধ্যে থাকে, তাহলে সেই মানুষটি নিজে থেকেই কারো আহ্বানের জন্য অপেক্ষা না করেই, সক্রিয়তার পথটি বেছে নেবে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ নিজে ছিলেন সক্রিয় চিন্তার মানুষ, অন্যদেরও চিন্তায় সক্রিয় হতে অনুপ্রেরণা দিতেন। আমাদের সমাজে এরকম মানুষের প্রয়োজন যখন সবচেয়ে বেশি, তখনই তিনি চলে গেলেন।

Comments