কিম জং উনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উত্তর কোরিয়ার ‘কৌশলগত পারমাণবিক মহড়া'

ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স
ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি ২ সপ্তাহের ব্যবধানে মোট ৭ বার পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

আজ পিয়ংইয়ং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলো 'কৌশলগত পারমাণবিক' মহড়া, যা দেশটির নেতা কিম জং উনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে।

এই উদ্যোগকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ নৌ মহড়ার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী ও প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে উত্তর কোরিয়া।

আজ সোমবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ছবি ও এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কেসিএনএর প্রকাশিত ছবিতে কয়েক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স
কেসিএনএর প্রকাশিত ছবিতে কয়েক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স

কেসিএনএর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, 'এই মহড়ার মাধ্যমে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারের সক্ষমতা ও ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে উপযোগিতা প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থান থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ও ধ্বংস করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।'

কিম জং উনের বরাত দিয়ে কেসিএনএ আরও জানায়, 'যদিও শত্রুরা আলোচনা ও সংলাপের কথা বলেই যাচ্ছে, আমাদের বলার কিছু নেই এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজন আছে বলেও আমরা মনে করি না।'

কিম দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চেয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তার দলের সম্মেলনে এ বিষয়টিকে বিশেষ প্রাধান্য দেন।

দেশটি গত মাসে তাদের পারমাণবিক আইনের সংশোধন করেছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে ঠিক কী কী পরিস্থিতিতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।

কিম উত্তর কোরিয়াকে 'অপরিবর্তনীয়' পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স
ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স

এ ঘটনার পর সিওল, টোকিও ও ওয়াশিংটন যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। এই মহড়ার অংশ নিয়েছে মার্কিন পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান, যা পিয়ংইয়ংকে ক্ষিপ্ত করেছে। তাদের মতে, এই মহড়াগুলো আগ্রাসনের প্রস্তুতি। 

কেসিএনএর প্রতিবেদন মতে, উত্তর কোরিয়া 'প্রকৃত যুদ্ধ পরিস্থিতির অনুকরণে সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে, যাতে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা ও পারমাণবিক পালটা আক্রমণের সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।'

কেসিএনএর প্রকাশ করা ছবিতে স্বল্প পাল্লার কেএন-২৫ ও কেএন-২৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। এছাড়াও আড়াই টন পেলোড সম্বলিত একটি ভারী ক্ষেপণাস্ত্র ও কেএন-০৯ ৩০০ এমএম এমএলআরএসও দেখা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি ছবিতে একটি নতুন মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও (আইআরবিএম) দেখা গেছে।

ইতোমধ্যে উত্তর কোরিয়া জাপানের ওপর দিয়ে একটি আইআরবিএম ছুঁড়ে সেটাকে প্রশান্ত মহাসাগরে নিক্ষেপ করেছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে দেশটি অন্য একটি আইআরবিএম পরীক্ষা চালিয়েছিল।

অজ্ঞাত অবস্থানে সগযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন কিম। ছবি: রয়টার্স
অজ্ঞাত অবস্থানে সগযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন কিম। ছবি: রয়টার্স

এছাড়াও উত্তর কোরিয়া ১৫০টি যুদ্ধ বিমান সহ উড়োজাহাজ মহড়া আয়োজনেরও দাবি করেছে।

সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‍্যান্ড কর্পোরেশনের বিশ্লেষক সু কিম বলেন, 'কিম সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াকে জানাতে চায়, ২ দেশের মধ্যে মৈত্রী, সমন্বয় ও প্রস্তুতির যেকোনো প্রদর্শনী মাঠে মারা যাবে।'

'আমরা খুব সম্ভবত উত্তর কোরিয়াকে খুব শিগগির দমে যেতে দেখবো না। এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের প্রতিপক্ষরাও খুব সহজে হাল ছেড়ে দেবে না', যোগ করেন তিনি।

ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স
ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করছেন কিম জং উন স্বয়ং। ছবি: রয়টার্স

সর্বশেষ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যানকে ভিত্তি করে নৌ মহড়া চালায়।

কাগজে কলমে দুই কোরিয়ার মধ্যে এখনও যুদ্ধ চলছে, কারণ ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত কোরীয় যুদ্ধ অস্ত্র বিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। ২ দেশের মধ্যে এখনও কোনো শান্তি চুক্তি সাক্ষর হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares August 5 as ‘July Mass Uprising Day’

It also declared August 8 as "New Bangladesh Day" and July 16 as "Shaheed Abu Sayed Day"

1h ago