সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর আইনে সম্মতি দেইনি: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ২টি বিতর্কিত বিলে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এই বিলগুলো পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে দেশটির সামরিক বাহিনী আরও ক্ষমতাবান হবে।

আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) রোববার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এই বিল ২টি সাক্ষর না করে ফিরিয়ে দেন, কিন্তু তার অধীনস্থরা 'তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।'

এই ২টি আইনে সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরিচয় প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীকে অবমাননার জন্য কারাদণ্ডের বিধান চালু করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট আলভির এই বক্তব্যে আইন ২টির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে।

তবে পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন আইনমন্ত্রী আহমেদ ইরফান আসলাম সাংবাদিকদের জানান, সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের কাছে বিকল্প ছিল বিলে সম্মতি দেওয়া অথবা 'সুনির্দিষ্ট মন্তব্য' সহ বিলগুলোকে পার্লামেন্টের কাছে পাঠানো।

কিন্তু এসব না করে প্রেসিডেন্ট আলভি 'ইচ্ছে করে সম্মতি প্রদানে বিলম্ব করেন' এবং সম্মতি বা কোনো মন্তব্য ছাড়াই বিলগুলো ফেরত পাঠান।

আসলাম জানান, প্রচলিত আইন অনুযায়ী, যেহেতু প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সাক্ষরিত বিল ১০ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়নি, এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনের রূপান্তরিত হয়েছে।

সিনেট সচিবালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই বিলগুলোতে 'প্রেসিডেন্ট সম্মতি রয়েছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।'

এই বিতর্কিত বিলগুলো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট আলভির কাছে পাঠানো হয়েছিল। নভেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশে ৯ আগস্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।

তবে নতুন জনশুমারির প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুননির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার যুক্তিতে নির্বাচন কমিশন আপাতত ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন মুলতবি করেছে। সীমানা পুনর্নিধারণের কাজে অন্তত ১ মাস সময় প্রয়োজন।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময়ই সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময়ই সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল কাকারের হাতে রয়েছে পাকিস্তানের শাসনভার। 

এ মাসের শুরুতে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য (সংস্কার) বিল ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী (সংস্কার) বিল দেশটির জাতীয় অধিবেশনে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়।

'অফিশিয়াল সিক্রেটস' নামের বিলে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ইনফরম্যান্ট বা সোর্সের পরিচয় প্রকাশ করলে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ঊর্ধ্বে ১ কোটি রুপি (প্রায় ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার) জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

আর অপর আইনে বলা হয়েছে, যদি কেউ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে তাহলে, তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও সদ্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেওয়াজ (পিএমএল-এন) ও তাদের মিত্ররা এ 'তাড়াহুড়া করে এসব নিপীড়নমূলক আইন' পাস করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেছে।

ইতোমধ্যে এসব আইনের ব্যবহারে বিরোধীদলের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের আওতায় পিটিআইর ভাইস চেয়ারম্যান মেহমুদ কোরেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিটিআই'র দাবি, কোরেশি একটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পেছানোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি রাজনৈতিক ফায়দার জন্য একটি গোপন কূটনীতিক বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিরোধী দলের সদস্য, রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো উল্লেখ করেছে, প্রতিমাসেই বাড়ছে গুমের ঘটনা।

পিটিআই জানিয়েছে, তারা এসব বিতর্কিত বিল বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে। দলটি প্রেসিডেন্টের প্রতি 'পূর্ণ সমর্থন'' জানিয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিও পিটিআইর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মে মাসে ইমরান খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর তার সমর্থক ও দলের কর্মীরা সহিংস প্রতিবাদ জানায় এবং সামরিক ক্যান্টনমেন্টগুলোতে হামলা চালায়। এরপর থেকেই তার দলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইমরানসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিভিন্ন অপরাধে কারাদণ্ড দেওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

Trump to decide on US action in Israel-Iran conflict within 2 weeks

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago