পাকিস্তান গণমাধ্যমে ‘নিষিদ্ধ’ ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফাইল ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফাইল ছবি: এএফপি

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইমরান খান ও তার রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার বিষয়ে বিধিনিষেধের অভিযোগ তুলেছেন দেশটির বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

কার্যত, ইমরান খান এখন দেশটির গণমাধ্যমে 'নিষিদ্ধ' একটি নাম। 

আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের একটি লাহোরভিত্তিক বেসরকারি নিউজ চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাংবাদিক আমির মেহমুদ (ছদ্মনাম) তার মোবাইলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পান। মেসেজটি পাঠিয়েছেন দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা।

মেহমুদ আল জাজিরাকে বলেন, 'মূলত, তিনি আমাদের চ্যানেলে নির্বাচন বিষয়ে প্রচারিত কিছু অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরা যেন আগামীতে পিটিআইর পতাকা না দেখাই বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র নিয়ে কিছু উল্লেখ না করি। তিনি নির্দেশ দেন, এ ধরনের প্রার্থীদের পিটিআই সমর্থিত না বলে 'স্বতন্ত্র' বলতে হবে এবং তারা কোন দলের সমর্থন পাচ্ছেন, তা উল্লেখ করা যাবে না।'

পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও ইন্টারনেটভিত্তিক নিউজরুমের সাংবাদিকরা মেহমুদের মতো একই ভাষার বার্তা পেয়েছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও অধিনায়ক ইমরান খান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই দলটি গঠন করেন। বিশ্লেষকদের মতে, পিটিআই পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তবে আগস্ট ২০২৩ থেকে কারাগারে বন্দি আছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। ইমরান উভয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০২২ এর এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান। এরপর থেকে ইমরানের দলের বিরুদ্ধে চলছে দমন-পীড়ন। পিটিআইর হাজারো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কয়েক শ নেতা দল ছাড়তে বাধ্য হন। অভিযোগ আছে, সামরিক বাহিনীর চাপে অনেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইমরান খান ও তার দলের বেশ কয়েকজন নেতার মনোনয়নপত্র নাকচ করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এমন কী পিটিআইর নির্বাচনী প্রতীকও (ক্রিকেট ব্যাট) বাতিল করে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করা হলেও আদালত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছে।

যার ফলে পিটিআইর অনেক নেতাকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে পাকিস্তানী গণমাধ্যমে ইমরান খানের বক্তব্য বা তার দলের জনসমাবেশ/বিক্ষোভ প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এখন পিটিআইর বিরুদ্ধে বিধিনিষেধের মাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাওয়ার পর মেহমুদ বিষয়টি নিয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। শিগগির চ্যানেলটির সব ধরনের ভিজুয়াল, গ্রাফিক্স, আলোচনা-সূচি থেকে পিটিআইর নাম বাদ দেওয়া হয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শুধু স্বতন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়।

আল জাজিরা সাত সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে। পরিণামের আশংকায় একজন ছাড়া বাকি সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। মেহমুদ সহ আরও তিনজন নিশ্চিত করেন, তাদেরকে পিটিআই'র পতাকা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে দলটির যোগসূত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্য মন্ত্রী মুরতাজা সোলাঙ্গি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি আল জাজিরাকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানান, 'আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেইনি'।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি (পিইএমআরএ) এখন পর্যন্ত কোনো দল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। আল জাজিরার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম উইং (আইএসপিআর) ও এ বিষয়ে আল জাজিরার প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

7h ago