ঢামেকে চিকিৎসাধীনদের বর্ণনায় গুলিস্তানে বিস্ফোরণের ঘটনা

ঢামেকে চিকিৎসাধীন আরিফুল হক সানি। ছবি: স্টার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন আরিফুল হক সানি। তিনি ওই ভবনের একটি দোকানের কর্মচারী।

তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছিলেন এবং চারপাশ থেকে শুধু চিৎকারের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন।

অলৌকিকভাবে তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে তার হাত বের করতে সক্ষম হন এবং জীবিত উদ্ধার হতে পারেন।

তিনি ছাড়াও বিস্ফোরণে আহত আরও ১৯ জন ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সানি বলেন, 'বিকাল সোয়া ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে ভবনের ভেতর থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই এবং সবকিছু যেন ভেঙে পড়তে শুরু করে। ওই সময় ঠিক আর কী হয়েছে, তা মনে নেই।'

সানির সঙ্গে একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই ঘটনার আরেক ভুক্তভোগী মো. তুহিন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংলগ্ন একটি ভবনে জুতা তৈরির দোকানে কাজ করেন।

তুহিন বলেন, 'বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। তারপর হঠাৎ আমার রুম অন্ধকার হয়ে গেল। খসে পড়া পলেস্তারার একটি টুকরো আমার মাথায় এসে পড়ে। দৌড়ে বের হয়ে সিঁড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই এবং আমার পা ভেঙে যায়।'

সাইফুল ইসলাম ওই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য অপেক্ষায় ছিল। এমন সময় তিনি বিকট শব্দ শুনতে পান।

প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন যে তার কম্পিউটারটি হয়তো বিস্ফোরিত হয়েছে।

বিস্ফোরণের পর কীভাবে প্রাচীরের ওপরে উঠে ভবনটি থেকে বের হন এবং তার পাশে থাকা ২ জন মারা গেলেও তিনি বেঁচে ফিরতে সক্ষম হন, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল।

বেঁচে থাকার জন্য স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'নতুন জীবন পেলাম ভাই।'

ঢামেক হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাইফুল। তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন ও খলিলুর রহমান ২ ভাই। তারা একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

গতকাল তারা তাদের মালামাল কুরিয়ার করতে যান। মালামাল কুরিয়ারে বুঝিয়ে দিয়ে ভবন থেকে বেরিয়ে যান জাহাঙ্গীর। কিন্তু, খলিল তখনো ভিতরেই ছিলেন এবং বিস্ফোরণে আহত হয়ে এখন ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, 'বিস্ফোরণের পর ভাইকে সব জায়গায় খুঁজছিলাম। একজন জানালেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।'

খলিলের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং ব্যাথায় তিনি চিৎকার করছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, বিস্ফোরণে আহত অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তাদের মধ্যে ২০ জন ঢামেক হাসপাতালে ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে ভর্তি রোগীদের। অনেকের হাড়ও ভেঙে গেছে।

তিনি বলেন, 'গতরাতে ১৩টি মরদেহ হাসপাতালে এসেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন মারা গেছে।

এই ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করার আগেই তার স্বজনরা জোর করে নিয়ে গেছে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এ. কে. এম হেদায়েতুল ইসলাম  বলেন, 'জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের পাশে একটি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়েছে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার জন্য।'

Comments

The Daily Star  | English

BNP's name being misused for personal gains: Rizvi

He urges party men to remain vigilant against committing misdeeds

1h ago