নতুন ভবন নয়, আগে পুনর্বাসন

তাদের চোখেমুখে একটাই চিন্তা—এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াবো কী করে?
সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা ধ্বংসস্তুপ থেকে কিছু অক্ষত আছে কি না খুঁজে দেখছেন। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট জুড়ে এখন শুধুই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাহাকার। চারিদিকে পোড়া গন্ধ। অগ্নিকাণ্ডের ২ দিন পার হলেও কোনো কোনো ধ্বংসস্তুপ থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে। 

সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা ধ্বংসস্তুপ থেকে কিছু অক্ষত আছে কি না খুঁজে দেখছেন। তাদের চোখেমুখে একটাই চিন্তা—এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াবো কী করে?

মার্কেটের অনেক দোকানের কলাপসিবল গেইট, দোকানের সাটার অক্ষত থাকলেও ভেতরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের অনেক দোকানের কলাপসিবল গেইট, দোকানের সাটার অক্ষত থাকলেও ভেতরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধারণা করা যেতে পারে, দোকানের ওপরে টিন থাকার কারণে আগুনের শিখা ওপর দিকেই পুড়িয়েছে বেশি।

এক লাইনে পাশাপাশি থাকা ৮-১০টি স্বর্ণের দোকানেও একই চিত্র দেখা যায়; বাইরে কলাপসবল গেইট লাগানো অবস্থায় থাকলেও ভেতরে পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্রোকারিজের দোকানগুলোর কাঁচের সমস্ত জিনিস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে মাটির সঙ্গে, ছাইয়ের সঙ্গে সাদা হয়ে মিশে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি দোকানের সামনে নারী-পুরুষ ও ছোট বড় ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বস্তায় ভরে লোহার অ্যাঙ্গেল, তার, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি দোকানের সামনে নারী-পুরুষ ও ছোট বড় ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বস্তায় ভরে লোহার অ্যাঙ্গেল, তার, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

মার্কেটটিতে পাশাপাশি খুচরা ও পাইকারি চালের বাজার ছিল। আগুন থেকে পাইকারি বাজার কিছুটা রক্ষা পেলেও পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে খুচরা মার্কেটের ছোট-বড় সব দোকান। কয়েকটি দোকানের ছাইয়ের স্তুপ থেকে তখনো ভেতরে ধোয়া বের হচ্ছে।

পুড়ে যাওয়া একটি হার্ডওয়্যারের দোকানের সামনে মালিককে দেখা গেল। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। দোকানে ১০-১৫ লাখ টাকার মাল ছিল। সব পুড়ে গেছে। কিছুই অক্ষত নেই।'

আগুনে শুধু দোকান নয়, ব্যবসায়ীদের ও তাদের পরিবারের স্বপ্নও পুড়ে গেছে। তবে তারা আবার ঘুরতে দাঁড়াতে চান।

যত দ্রুত সম্ভব ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করে এখানে চৌকি বসিয়ে হলেও বেচাকেনা শুরু করতে চান ব্যবসায়ীরা। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

'সিটি করপোরেশন বহুতল ভবন করে দেবে এমনটি শুনেছি। কিন্তু সেটা হতে তো আরও ২-৩ বছর লাগবে। এসময় আমরা, ব্যবসায়ীরা কী করবো?,' ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন।

'নতুন ভবন নয়, আমরা আগে পুনর্বাসন চাই। এখানে আবার দোকান নিয়ে বসতে চাই। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাই। যত দ্রুত সম্ভব ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করে এখানে চৌকি বসিয়ে হলেও আমরা বেচাকেনা শুরু করতে চাই। প্রয়োজনে নিজেরাই পরিষ্কার করে নেব,' বলেন তিনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট জুড়ে এখন শুধুই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাহাকার। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও  ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার সলিমুল্লাহ সলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা চান আবার মার্কেট হোক, দোকান হোক। কিন্তু তারা বেচাকেনা বন্ধ করতে চান না। মার্কেট কাঠামো তৈরি করতে গেলে সময় লাগবে। ততদিন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ রাখতে চাইছেন না। সেক্ষেত্রে রাস্তার একটি পাশ বন্ধ রেখে অস্থায়ীভাবে দোকান বসতে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি।'

উল্লেখ্য, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট যোগ দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka brick kiln

Dhaka's toxic air: An invisible killer on the loose

Dhaka's air did not become unbreathable overnight, nor is there any instant solution to it.

13h ago