গাজী টায়ারসের ভবনটিতে আবারও জ্বলে উঠেছে আগুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ারস কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে আবারও আগুন জ্বলে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় আগুন নিভিয়ে ফেলার কথা জানালেও দুপুর থেকে ভবনটির বিভিন্ন অংশে অল্প আগুন দেখা যায়। যা বিকেলের পর থেকে বাড়তে থাকে।
গাজী টায়ারসের কারখানায় নতুন করে আগুন জ্বলে উঠেছে। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ারস কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে আবারও আগুন জ্বলে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় আগুন নিভিয়ে ফেলার কথা জানালেও দুপুর থেকে ভবনটির বিভিন্ন অংশে অল্প আগুন দেখা যায়। যা বিকেলের পর থেকে বাড়তে থাকে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়ও ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাতে তীব্র আকারে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে কাজ করছেন।

সন্ধ্যা ছয়টায় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'ভবনটির ভেতরে কয়েকটি স্থানে এখনো আগুন জ্বলছে। আমরা তা নেভাতে কাজ করছি। আগুন নেভানোর আগ পর্যন্ত ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকার কারণে ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে হতাহতের বিষয়ে খোঁজ করতে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।'

এদিকে, ভোরে আগুন নেভানোর পর বিকেলের দিকে ভবনটিতে উদ্ধার অভিযান চালানোর একটি পরিকল্পনা ছিল ফায়ার সার্ভিসের। ভবনটিতে প্রবেশ করা যাবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে গণপূর্ত বিভাগের 'এক্সপার্ট প্রকৌশলী' দলেরও সহযোগিতা চান ফায়ার সার্ভিস। তবে, দুপুরে গণপূর্তের একটি দল আসলে প্রচণ্ড উত্তাপ ও কিছু অংশে আগুন জ্বলতে থাকার কারণে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।

নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম জানান, তাদের প্রকৌশলীদের একটি দল দুপুরে ভবনটি পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু তখনও ভবনটিতে আগুন নিভে গেলেও অতিরিক্ত উত্তাপ থাকার কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।

'বাইরে থেকে দেখেছি, আগুনের তাপে ভবনটির বিভিন্ন অংশ থেকে কংক্রিট খসে পড়ছে। কয়েকটি স্থানে তখনো আগুন জ্বলছিল। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগামীকাল মধ্যে তারা আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হবেন। তখন আমরা আবার এসে পর্যবেক্ষণ করে ভবনটিতে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ দেব।'

প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

এদিকে গাজী টায়ারস কারখানায় হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানকে প্রধান করে কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।

আজ দুপুরে কারখানাটি পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু করবে ফায়ার সার্ভিস। পাশাপাশি নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করতে অনুসন্ধান সেল গঠন করা হবে।

ভবনটির ভেতরে টায়ার তৈরির রাবার, প্ল্যাস্টিকজাতীয় বস্তুর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সালফার মজুদ ছিল বলেও জানান ডিসি।

সালফার মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাজী টায়ারসের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. কামরুজ্জামানও।

নিখোঁজদের তালিকা করছেন শিক্ষার্থীরা

নিখোঁজদের তালিকা করছে্ন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা ১২৬ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন বলে জানান সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী মাহিমা মীর রিপা।

'রোববার রাতে আগুন লাগলেও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আমরা কারখানাটিতে এসে দেখে দেখেছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তালিকা করা হচ্ছিল না। নিখোঁজদের স্বজনরা হাতে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু কেউ তাদের নাম তালিকাভুক্ত করছিলেন না। প্রশাসনের কারও কাছে নিখোঁজের সংখ্যা জানতে চাইলেও তারা জানাতে পারছিলেন না। গণমাধ্যমে দেখেছি ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজদের তালিকা করেছিল, কিন্তু আমরা তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা তালিকার করার কথাটি অস্বীকার করেন। তাই আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে তালিকা করছি।'

তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সন্ধ্যা ৭টায় ডিসি বলেন, 'রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে নিখোঁজদের একটি তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়ার পর তারা তালিকা করা শুরু করেছেন। তবে তালিকায় কতজন রয়েছেন এ মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না।'

শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রসঙ্গে বললে ডিসি বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের তালিকাটিও সংগ্রহ করব। দুটো মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা হবে।'

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, 'মামলাটি মূলত মালিকপক্ষেরই করা উচিত। তারা এখনো মামলা করেননি।'

রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিখোঁজদের স্বজনদের কারখানার প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষমান দেখা গেছে।

অন্যদিকে আগুনের ঘটনায় গাজী টায়ারস কারখানার কর্মরত কোনো কর্মী নিখোঁজ নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান।

Comments

The Daily Star  | English

Half of Noakhali still reeling from flood

Sixty-year-old Kofil Uddin watched helplessly as floodwater crept into his home at Bhabani Jibanpur village in Noakhali’s Begumganj upazila on August 10. More than a month has passed, but the house is still under knee-deep water.

2h ago