বৃষ্টির অপেক্ষায় আমন চাষি

ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পটুয়াখালী জেলায় আমন বীজতলা তৈরি ও আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
আমন চাষ
ছবি: স্টার

ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পটুয়াখালী জেলায় আমন বীজতলা তৈরি ও আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

চলতি বছর এ জেলায় ১ দশমিক ৮৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৩৯১ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।

বাকি জমিতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা আমন চাষ করতে পারছেন না।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের তিল্লা গ্রামের কৃষক আবদুল সত্তার খলিফা এ বছর ২ একর জমিতে আমন চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তবে, এখন যেখানে আমনের চারা রোপণের কথা, সেখানে বীজতলাই করতে পারেনি। মৌসুম শুরু হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে আমন আবাদে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।

সত্তার খলিফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির পানিতে রোপা আমন চাষ ভালো হয়। চারা অন্য এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে পারলেও বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো চারা রোপণে খেত প্রস্তুত করতে পারিনি।'

পরিমাণ মতো বৃষ্টি না হলে এবার অনেক কৃষক ধান লাগাতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শুধু সত্তার খলিফাই নয় জেলায় আমন আবাদের মৌসুম শুরু হলেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা আমনের খেত প্রস্তুত করতে পারছেন না।

একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সগির ফকির পানি ছাড়াই তার আমন খেত প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আষাঢ়ের শেষের দিকটা বীজতলার উপযুক্ত সময়। শ্রাবণ শেষ হতে চললেও বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমনের খেত প্রস্তুত করতে পারিনি।'

তিনি আরও বলেন, `বীজতলা ও রোপণের জমি রোদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সেচের জন্য বৃষ্টিই আমাদের ভরসা। এ বছর ১৩ একর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমন রোপণ করতে পারিনি।'

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই উপকূলের চাষিরা আমনের পরই তরমুজ চাষ শুরু করেন। আমনের চাষ দেরিতে হলে তরমুজ চাষে এর প্রভাব পড়তে পারে। মৌসুম শুরু হলেও অনেকেই পানির অভাবে আমন চাষ করতে পারছেন না।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বীজতলা ও শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করেন এই অঞ্চলের চাষিরা। মূলত বর্ষার বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকেরা রোপা আমন চাষ করেন।

বীজতলায় তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। অনেকের চারার বয়স এক মাস পেরিয়ে গেছে। মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন চাষ পিছিয়ে পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক একেএম মহিউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষে দেরি হচ্ছে। মৌসুমের এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক আমন রোপণ হওয়ার কথা থাকলেও তা খুব সামান্যই হয়েছে। আমন খেত শুকিয়ে গেছে।'

'গত বছর জুলাইয়ে ৭৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এ বছর জুলাইয়ে মাত্র ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পর পর ২ দিন ভারী বৃষ্টি না হলে আমন আবাদ সংকটে পড়বে,' যোগ করেন তিনি।

Comments