গোলাপগ্রামে কৃষকের মুখে হাসি

গোলাপগ্রাম, সাভার, গোলাপ,
গোলাপ বাগান থেকে গোলাপ তুলেছেন এক কৃষক। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

​​​​​​​​​​​শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, সাদুল্লাপুর, বাগনীবাড়ি, ভবানীপুর ও বিরুলিয়াসহ সাভারের কয়েকটি গ্রাম মিলে গড়ে উঠেছে 'গোলাপরাজ্য'। আর সেই গোলাপরাজ্যের রাজা হলে এখানকার চাষিরা। কিন্তু, গোলাপরাজ্যে বিষাদ নেমে এসেছিল করোনা ও বাগানে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে। কেড়ে নিয়েছিল এখানকার গোলাপ চাষিদের মুখের হাসি।

তবে, চলতি বছরে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ছত্রাকের আক্রমণ কমায় ও গোলাপের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে আবারও হাসি ফুটেছে। বিশেষ করে ১ জানুয়ারি উপলক্ষে গোলাপের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সেই হাসি যেন আরও চওড়া হয়েছে। এ কারণে খুশির আমেজ বইছে গোলাপ চাষিদের পরিবারে।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এলাকার প্রায় দেড় হাজার কৃষক বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষে জড়িত। এখানকার প্রায় ২৭৫ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়।

শনিবার সাভারের গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাসি মুখে গোলাপ চাষিদের কেউ ব্যস্ত আছেন গোলাপ তুলতে, কেউ বাগান থেকে তোলা গোলাপ তরতাজা রাখতে পানিতে রাখছেন, কেউ গোলাপ বাজারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ মাথায় ঝাকা বোঝাই গোলাপ নিয়ে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।

চাষিরা কেউ ব্যস্ত আছেন গোলাপ তুলতে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

গোলাপ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরের শুরু থেকে মার্চ মাসের পুরোটাই গোলাপের মৌসুম। এসময় বাগানগুলো ফুলে পূর্ণ থাকে। ১ জানুয়ারি, ফাল্গুনের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি অনেক বাড়ে।

প্রায় ১ যুগ ধরে গোলাপ চাষের সঙ্গে জড়িত মোস্তাপাড়া গ্রামের রাশিদুল হাসান (২৯) জানা, তিনি ও তার ভাই মিলে ১০০ শতাংশ লিজ নেওয়া জমিতে গোলাপ চাষ করেন। তার পরিবার গোলাপ চাষের ওপর নির্ভর করেই চলে।

রাশিদুল হাসান বলেন, 'করোনার কারণে ফুল বিক্রি অনেক কমে গিয়ছিল। ফলে, আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। এ ছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মাঝের দিকে ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপের বাগান নষ্ট হয়ে যায়। এতে পুরো মৌসুম লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু, এবার ডিসেম্বরজুড়ে গোলাপের দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছি।'

রাশেদুল আরও বলেন, 'ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রতিটি গোলাপ ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি করলে, ১ জানুয়ারি উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিটি গোলাপ পাইকারিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি করছি। গতকাল শুক্রবার বাগান থেকে ২ হাজার গোলাপ তুলে বাজারে নিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আশাকরছি এই সিজনে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোলাপের ভালো দাম পাব।'

১৫ বছর ধরে অন্যের জমি লিজ নিয়ে গোলাপ চাষ করেন আব্দুল জলিল। ৫ বছরের জন্য ৪৫ শতাংশ জমিতে দেড় লাখ টাকায় লিজ নিয়ে পৃথক ২টি গোলাপ বাগান করেছেন তিনি।

বাগান থেকে তোলা গোলাপ তাজা রাখতে পানিতে রাখছেন। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

আব্দুল জলিল বলেন, 'গোলাপ চাষে খরচ অনেক। সার, কীটনাশক ও কৃষকের মজুরি বাড়ায় প্রতিটি ফুল ৪ টাকায় বিক্রি না করতে পারলে গোলাপ চাষে মুনাফা হয় না বললেই চলে। তবে, ডিসেম্বরে গোলাপের ফলন ভালো থাকায় ও বাজারে দাম ভালো থাকায় আশানুরুপ মুনাফা হয়েছে।'

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, 'করোনার কারণে ফুল বিক্রি না হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পরেছিলেন। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা আবারও লোকশানে পড়েন। তবে, আশার খবর হচ্ছে এবার চাষিরা গোলাপের ভালো ফলন পাচ্ছেন এবং বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর গোলাপ চাষিদের মুখে হাসি ফিরেছে।'

গোলাপ চাষ হয় এমন কয়েকটি গ্রাম মিলে সাভারে গড়ে উঠেছে গোলাপগ্রাম। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা থেকে হাজারো দর্শনার্থী গোলাপ বাগান দেখতে পরিবার পরিজন নিয়ে গোলাপগ্রামে ঘুরতে যান। এলাকায় অন্তত ২০টি ফুলের দোকান ও অসংখ্য মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসব দোকান পরিচালনা করছেন এলাকার বেকার যুবকরা।

ফুল দোকানদার রাকিবুল হাসান বলেন, 'এক সময় আমি বেকার ছিলাম। যখন গোলাপ বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমাদের এলাকায় আসতে শুরু করে। তখন সরকার থেকে প্রনোদনা নিয়ে ফুলের দোকান দেওয়া হয়। আমি প্রতিদিন ফুল বিক্রি করে সংসার চালাতে পারছি। পরিবার সুখে আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago