রংপুরের ৫ জেলায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ

৩৪ হাজার কৃষককে প্রণোদনা
রংপুরের পাঁচ জেলায় এবার গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরে গেল বছরের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

এ বছর সরিষা চাষ করা হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। গেল বছর জমির পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৫০০ হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চাষিদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর ৩৪ হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা। প্রত্যেক কৃষক প্রণোদনা হিসেবে পেয়েছেন এক কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার। চলতি বছর সরিষার উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের কৃষক নুর আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল বছর তারা সরিষা বিক্রি করে কম দাম পেয়েছিলেন। গেল বছর প্রতিমণ (৪০ কেজি) সরিষা বিক্রি করেছিলেন ১৬০০-২৩০০ টাকা দরে তবে ২০২২ সালে তা ছিল ৩,০০০-৩৪০০ টাকা। এবছর সরিষার ভালো দাম আশা করছেন চাষিরা। গেল বছর তিনি ছয় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করলেও এ বছর সরিষা চাষ করেছেন ৯ বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘা জমিতে তারা ৫-৬ মণ সরিষা উৎপাদন করেন। এ বছরও ভালো ফলনের আশা করছেন।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামের কৃষক সুবল চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরিষা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সরিষা চাষের জমিতে অন্য ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। জমিকে উর্বর রাখতে তারা সরিষা চাষ করছেন। তিনি সরকারি প্রণোদনা পাননি তবুও গেল বছরের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ করেছেন। তিনি এ বছর ছয় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমন ধান কাটার পর তিনি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সরিষা কাটার পর তিনি জমিতে বোরো ধান লাগাবেন। গেল বছর তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে উৎপাদন পেয়েছিলেন ১৫ মণ। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করেছিলেন ১৯০০ টাকা দরে। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি। সরিষা চাষ মাটি ও পরিবেশের জন্য খুবই ভালো।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক সতীশ চন্দ্র সেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরিষা চাষে সরকরি প্রণোদনা পেয়ে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। গেল বছর সরিষা ছিল দুই বিঘা জমিতে। এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এবছর সরিষা বিক্রি করে ন্যায্য দাম পেলে তিনি আগামিতে সরিষা চাষের জমি বাড়াবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, দেশে তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার চাষ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কৃষকদের কম পরিশ্রম ও কম অর্থ খরচ করতে হয়। এছাড়া সরিষা চাষ জমির উর্বরতা শক্তিতে বৃদ্ধি করে আর পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে। কৃষকরা এ বছর সরিষা বিক্রি করে ন্যায্য দাম পেলে আগামীতে প্রণোদনা ছাড়াই তারা সরিষা চাষে আগ্রহী হবেন।

Comments