প্রশ্নপত্র ফাঁস: নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ আটক ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় একটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় একটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।

আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

আল মঈন জানান, গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদান প্রদানের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল ২০ আগস্ট পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। এতে র‌্যাব প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

ছবি: সংগৃহীত

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর অভিযানে রাজধানীর মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে শরীয়তপুরের পালং ইউনিয়নের ফরিদা খাতুন (৫১); চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরের মোছা. মনোয়ারা খাতুন (৫২); সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের মোছা. নার্গিস পারভীন (৪৭); গাইবান্ধা জেলার সাঘাটার মোছা. কোহিনুর বেগম (৬৫); টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের মো. ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও টাঙ্গাইলের কালিহাতির মো. আরিফুল ইসলাম (৩৭)-কে আটক করা হয়।

এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপি এবং ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, এই চক্রের মূলহোতা ফরিদা খাতুন। তিনি রাজধানী মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের কম্প্রিহেনসিভ নার্সিং অ্যান্ড প্যাথোসাইকোলজি বিষয়ের প্রশিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি প্রতিষ্ঠানেটিতে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিং-এর দায়িত্বে থাকেন। চক্রের অপর সদস্য গ্রেফতার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তার অন্যতম সহযোগী। তারা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকতার আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। ফরিদা গত ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত বিএসসি ইন নার্সিং প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিন কর্তৃক নির্বাচিত ৪ সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন। গত ১৩ আগস্ট নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম ফরিদা খাতুনের কাছে কম্প্রিহেনসিভ নার্সিং অ্যান্ড প্যাথোসাইকোলজির প্রশ্নপত্র চাইলে ফরিদা খাতুন প্রিন্টিং ও প্যাকিং-এর সময় সংগ্রহ করে রাখা প্রশ্নপত্র নার্গিস ও মনোয়ারাকে দেন। পরবর্তীতে তাদের এই চক্রের আরেক সদস্য প্রশ্নপত্রটি গ্রেফতারকৃত ইসমাইলের মাধ্যমে কোহিনুর বেগমের নিকট প্রদান করে। এ সময় ইসমাঈল কিছু কপি নিজের কাছে রেখে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের নিকট সরবরাহ করে। পরবর্তীতে কোহিনুর বেগম ও আরিফ প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিকট অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন।

ফরিদা, মনোয়ারা ও নার্গিস গত প্রায় ১০ বছর ধরে একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তারা এর আগেও বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজসগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন কর্তৃক নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং এবং প্যাকিং-এ নিযুক্ত টিমের সদস্য ছিলেন। কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন।

ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত এবং গ্রেফতারকৃত আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের পোস্ট বেসিক ইন নার্সিং-এর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা গত ২০ আগস্ট প্রশ্নপত্রটি ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম সদস্য কোহিনূর বেগম-এর কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করেন।  আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন।
 

 

 

 

Comments