মাদক কারবারির পক্ষে আন্দোলনে অন্য মাদক মামলার আসামিরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাদক চোরাচালানের চার মামলার আসামির পক্ষে আন্দোলনে নেমেছেন একদল মানুষ। যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রায় সবাই মাদক কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলাও আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার কাশিনগরে মাদক মামলার আসামির পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন অন্য মাদক মামলার আসামিরা। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাদক চোরাচালানের চার মামলার আসামির পক্ষে আন্দোলনে নেমেছেন একদল মানুষ। যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রায় সবাই মাদক কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলাও আছে।

মাদক চোরাকারবারে অভিযুক্ত ইব্রাহিম মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামে। গাঁজা ও ফেনসিডিল পাচারের অভিযোগে চারটি মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে গাঁজা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে। সেদিন থেকে তিনি পলাতক।

গত বৃহস্পতিবার কাশিনগর গ্রামের রেলক্রসিং এলাকায় একদল লোক ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে মাদক মামলার আসামি কাশিনগর গ্রামের দুলাল, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কার হওয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতা একই গ্রামের বাসিন্দা রুবেল, একই গ্রামের বাসিন্দা মানিক ওরফে বাংলা মানিক, নলগড়িয়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শাহ জামাল ওরফে পাতলা জামাল ও আখাউড়া উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়াসহ কাশিনগর গ্রামের গ্রামের কুশাইবাড়ির বাসিন্দা একাধিক মাদক ব্যবসায়ী অংশ নেন।

সম্প্রতি ১৫ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা ইব্রাহিমের নামে গাঁজা পাচারের মামলা দায়ের করার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র তাকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। মামলার অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করতে খোদ স্থানীয় ইউপি সদস্য এই মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার স্থানীয় কাশিনগর গ্রামের রেলক্রসিং এলাকায় একদল লোক ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা আছে।

ওই সমাবেশে মাদক মামলার আসামি কাশিনগর গ্রামের দুলাল, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কার হওয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতা একই গ্রামের বাসিন্দা রুবেল, একই গ্রামের বাসিন্দা মানিক ওরফে বাংলা মানিক, নলগড়িয়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শাহ জামাল ওরফে পাতলা জামাল ও আখাউড়া উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়াসহ কাশিনগর গ্রামের গ্রামের কুশাইবাড়ির বাসিন্দা একাধিক মাদক ব্যবসায়ী অংশ নেন।

ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া দাবি করেন, ইব্রাহিম জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছের চাষ করে। তার ছেলে ও জামাই ইতালিতে থাকে। সে এই ধরনের লোক নয়, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে দেওয়া তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাচ্চু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইব্রাহিমের নামে আগে মামলা ছিল কিনা এটা তো আমরা জানি না। সাত-আট বছর আগে তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল বলে শুনেছিলাম। তার ছেলে মেয়েরা বিদেশে চলে যাওয়ার পর তিনি আর এসবের সঙ্গে জড়িত নেই বলে শুনেছিলাম।'

সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করব না।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মামলায় বলা হয়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে রয়েল ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৯ কেজি গাঁজাসহ ইব্রাহিমকে আটক করা হয়। এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে, পাইকপাড়া গ্রামের মো. হানিফ ভূঁইয়া ও ইব্রাহিমকে মামলায় আসামি করা হয়।

মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে জানান, জব্দ করা গাঁজার প্রকৃত মালিক ইব্রাহিম সকালে গাঁজার প্যাকেটগুলো রয়েলের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রয়েল তাদেরকে জানায়, ইব্রাহিম বিজয়নগর থেকে গাঁজা তার বাড়িতে জমা রাখে। এরপর সেখান থেকে জেলা সদরসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, থানার রেকর্ড অনুযায়ী গত ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ইব্রাহিমের নামে মোট চারটি মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় একটি, ২০১৫ সালের ৮ ও ১৩ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি এবং ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল একই আইনে আরেকটি মামলা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রয়েল যে তথ্য দিয়েছে সেটার ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়। একজন ইউপি সদস্য কেন আসামির পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। ইব্রাহিম যদি ভালো মানুষই হবেন, তাহলে তার পক্ষে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা কেন মাঠে নেমেছেন?'

Comments