মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন আসছে গরু ও মাদক

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে বিজিবির জব্দ করা গরু-মহিষ। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যেও সক্রিয় আছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত দেড়মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভাল্লুক খাইয়া, চাকঢালা ও দৌছড়ির পয়েন্টে চোরাই পথ দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরু-মহিষ এবং বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এসব অবৈধ পণ্যের চালান নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন চোরাকারবারি চক্র।

বিজিবি ও প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে অবৈধভাবে আনা ২৫টি গরুসহ ১ জনকে আটক করা হয়।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের আলীকদমের ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পোয়ামুহুরী সীমান্ত এলাকা থেকে ১৭টি গরু আটক করে। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আলীকদমের কানা মেম্বার ঘাট থেকে ২২টি ট্রাকে করে নেওয়ার সময় ১১৮টি গরু-মহিষ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত ২৯ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির সদস্যরা ২৪টি মহিষের একটি পাল জব্দ করে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৪টি গরু-মহিষ আটকের তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রশাসন ও বিজিবির উদ্যোগে ১১৬টি গরু-মহিষ নিলামে ৮৭ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, প্রতিদিন ১৫-২০টির মতো গরু-মহিষ এবং নানা ধরনের মাদকদ্রব্য দেশে আসছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় খামারি মো. আইয়ুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চোরাই পথে গরু আসায় সংকটের মুখে পড়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ৫টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজারের রামু, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের খামারিরা। নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার বাইশারী ও গর্জনীয়ার বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চোরাই গরু আসায় দেশি গরুর দাম কমে গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৫টি পয়েন্ট এবং আলী কদমের ৩টি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে গরু আনছে চোরাকারবারিরা।

অবৈধ পথে চোরাচালানের বিষয়ে জানতে চাইলে ১১ বিজিবির জোন কমান্ডার ও অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ করে ফুলতলী পয়েন্টের লাম্বাশিয়া, দোছড়ি ও ভাল্লুক খাইয়া চোরাই পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ এবং বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসে। এসব মালামালের মধ্যে কিছু গরু-মহিষ জব্দ করে কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে। আর মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে আমরা নিজেরাই সেগুলো ধ্বংস করে ফেলি।'

বিজিবি কেন চোরাচালান বন্ধ করতে পারছে না প্রশ্ন করা হলে রেজাউল করিম বলেন, 'সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, ইয়াবা ও চোরাই পথে আনা মিয়ানমারের গরু-মহিষসহ সব ধরনের অবৈধ পণ্য আটকের বিষয়ে বিজিবি আগের চেয়ে বেশি তৎপর আছে এবং থাকবে।'

সীমান্ত এলাকায় চোরা কারবার সম্পর্কে ফুলতলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সন্ধ্যা নামলেই ফুলতলির পথ দিয়ে চোরাই গরু আনার কাজ শুরু হয়। এরপর এশার নামাজের পর রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে গরুর পাল এপারে নিয়ে আসা হয়। প্রশাসন ও বিজিবি টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে এসব কাজ।'

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় আছে সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারি চক্রগুলো। এর মধ্যে সীমান্তের মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা গরু, মহিষ ও মাদক জব্দ করতে আমরা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। গরু চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সতর্ক আছে।'

অবৈধ চোরাচালান এবং সীমান্ত এলাকায় বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মেহেদি হাসান কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিয়ানমারের ভেতরের সংঘাতকে কাজে লাগাতে একদল চোরাকারবারি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল নাইক্ষ্যংছড়িতে ২৪টি মহিষ জব্দ করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত। আজকেও আমি নিজেই সারাদিন তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় ছিলাম। সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং চোরাচালান রোধে বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

4h ago