জবাবদিহির অভাবে পুলিশের অপরাধ প্রবণতা

অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নামমাত্র শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন পুলিশের কিছু সদস্য। এমনই মনে করছেন অপরাধবিজ্ঞানী ও আইন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতীকী ছবি

অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নামমাত্র শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন পুলিশের কিছু সদস্য। এমনই মনে করছেন অপরাধবিজ্ঞানী ও আইন বিশেষজ্ঞরা।

চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন থেকে শুরু করে ঘুষ, মাদক চোরাকারবার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, অবৈধভাবে আটক করাসহ পুলিশের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধের অভিযোগ মূলত পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

পুলিশ কর্তৃপক্ষই তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে অনেককে বিভাগীয় শাস্তি দিয়েছে। আবার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই পুলিশ সদস্যরা তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, তাদেরকে যে শাস্তি দেওয়া হয় তা অতি সামান্য। অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যা কোনোভাবেই মেলে না।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক দ্য ডেইরি স্টারকে বলেন, 'কোনো না কোনোভাবে (পুলিশে) অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে, তারা সেই অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন।'

তিনি জানান, যেসব ঘটনায় মিডিয়া কাভারেজ হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, 'কোনো ঘটনা যদি সংবাদ শিরোনাম হয়, কেবলমাত্র তখনই তা (পুলিশের) দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এই কারণেই তারা অপরাধের অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।'

তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না বা সীমিত আকারে নেওয়া হয়। বিদ্যমান আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

বদলি, পদোন্নতি স্থগিতের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় শাস্তি দিতে হবে।'

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের জন্য উন্নত দেশগুলোর মতো একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনেরও পরামর্শ দেন অধ্যাপক ফারুক।

গত ১২ মে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসে বাংলাদেশ সরকারের সরবরাহ করা তথ্য অনুসারে, দেশের ২ লাখ ১৩ হাজার আইন প্রয়োগকারী বাহিনী সদস্যের মধ্যে প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কেবলমাত্র ২০২১ সালে বিভাগীয় তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে।

২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার বা মোট বাহিনীর ৫৫ শতাংশ। ওই সময়ের মধ্যে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্তত ১ হাজার ৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়।

২০২১ সালে মোট ১৭ হাজার ৯৬৬ জন সদস্য সতর্কতা, তিরস্কার বা অস্থায়ী বেতন হ্রাসের মতো ছোটখাটো শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিল এবং ২ হাজার ৩৮৮ জন বরখাস্ত বা ডিমোশনের মতো বড় শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

কিন্তু প্রায়শই দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে সুবিধা নিতে পারে সেখানে বিভাগীয় শাস্তি ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার একটি পুলিশ ইউনিটে কর্মরত একজন কনস্টেবল পুলিশ বিভাগে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাতের অপরাধে ২ বছরের মধ্যে ২ বার বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা।

ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এখনো একই ধরনের আরেকটি অপরাধের তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

কয়েক বছর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কর্মরত অবস্থায় রেশন কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে নাফিদুল ইসলাম নামে আরেক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শাহজাহানপুর পুলিশ নাফিদুল ও পুলিশের আরেক সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে।

পুলিশের অপরাধের শিকার কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পাননি।

দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি এমন ২ ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে। একজনকে ২০১৬ সালে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে, অপরজনকে ২০১৯ সালে ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি পুলিশ দল নির্যাতন করেছে।

তারা জানান, অপরাধীরা তাদের ক্ষমতার যে অপব্যবহার করেছে, সেই বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে নামমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভুক্তোভোগীরা জানান, বিচার চেয়ে আদালতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে বাধা দেন।

এর ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। বাংলাদেশ পুলিশের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন ঘটনায় ভুক্তোভোগী ৭৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ থানায় অভিযোগ জানাননি।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, অভিযোগ না করার পিছনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, মামলা করার সময় এবং আদালতে হাজির হওয়ার সময় প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া, পুলিশের অবন্ধুত্বসুলভ আচরণ এবং 'আর্থিক সম্পৃক্ততা'।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (অপারেশনস) হায়দার আলী খান অবশ্য দাবি করেছেন, ২ লাখ ১৩ হাজার সদস্যের মধ্যে খুব কম সদস্যই ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু আমরা ইউনিফর্মে থাকি, তাই পুলিশের অপরাধ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যখন কোনো পুলিশ অপরাধ করে, তখন আমরা ছাড় দেই না। আমরা যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

তিনি জানান, তারা সব সময় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেন এবং কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের কী শাস্তি হতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, 'বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করা হয়। তদন্তে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি ফৌজদারি অপরাধ করলে ফৌজদারি মামলাও করা হয়।'

এ ধরনের কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও কেন পুলিশ সদস্যরা এখনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, পুলিশ যেহেতু সব সময় অপরাধীদের মোকাবিলা করে, কিছু সদস্য হয়তো অপরাধীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়।'

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

গত কয়েক মাসে বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার এক ডজনেরও বেশি ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।

উদারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, পল্লবী পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহবুবুল আলমের কথা।

গত ৬ সেপ্টেম্বর এক পথচারীর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে তাকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর অভিযোগে আলম ও তার ২ সোর্সকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কেরানীগঞ্জে এক জুয়েলারি দোকানের কর্মীর কাছ থেকে ৯৮ তোলা স্বর্ণ লুটের অভিযোগে গত ১২ সেপ্টেম্বর কনস্টেবল কামরুজ্জামান ও তার ৭ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ১৭ জুলাই রাজধানীর গাবতলী এলাকায় এক জুয়েলারি দোকানের কর্মীর কাছ থেকে ৩৮ তোলা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্ত ওই এএসআই ওই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসআই মাসুদুর রহমানের দলের সদস্য ছিলেন। গত বছর ১৯ আগস্ট ঢাকার রূপনগর এলাকার এক নারী অভিযোগ করেন, অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায় মাসুদুর।

গত ৮ জুলাই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার এক কনস্টেবলসহ ৪ জনকে ৫ হাজার ২৬০টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এসব ঘটনার মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ না করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শিরোনামে উঠে আসা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের তথাকথিত পৃষ্ঠপোষক বনানীর পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা ছিল দেশের মানুষের কাছে আলোচনার বিষয়।

এ ছাড়া, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ২ কর্মকর্তাসহ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ২ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়েরের পর তাদের ক্লোজ করা হয়।

জবাবদিহির ঘাটতি

অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধ বন্ধ করা থেকে সরে এসেছে পুলিশ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা মামলা নেওয়ার জন্য ঘুষ দাবি করেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নেন এবং মামলা দায়ের করার সময় ও গ্রেপ্তারের সময় রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত বা প্রভাবশালীদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।

অধ্যাপক ওমর ফারুক আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে বদলি বা পদোন্নতি পান।

তিনি বলেন, 'পুলিশ যে উদ্ভাবন বা কৌশলই গ্রহণ করুক না কেন, যতদিন মানুষ সেবা না পাবে, ততদিন তারা ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে না।'

তিনি জানান, পুলিশ বিভাগে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে করতে হবে।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা জানান, লোভ সামলাতে পারে না এমন কিছু অবাঞ্ছিত মানুষ বাহিনীতে চাকরি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে খারাপ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরে কার্যকর জবাবদিহির অভাব, আইন রক্ষাকারী বাহিনীটিকে আইন লঙ্ঘনকারীতে পরিনত করার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

তিনি বলেন, 'এর অর্থ এই নয় যে ভালো পুলিশিংয়ের উদাহরণ নেই। তবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগের তুলনায় ভালো পুলিশিং খুব কম।'

তিনি আরও বলেন, 'আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের জন্য মানুষ পুলিশের কাছে যাওয়ার আস্থা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।'

'পুলিশের অপরাধ তদন্তের পর প্রতিবেদনে অনেক কিছু গোপন করতে পারে। কারণ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষও পুলিশের জবাবদিহির বিষয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না', যোগ করেন তিনি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বিপরীতে, জবাবদিহির ঘাটতির কারণ সাধারণত রাজনৈতিক। এর ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্চে তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য অশুভ।'

মাদক দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসোনোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এ ধরনের ঘটনা ত্রুটিপূর্ণ চেইন অব কমান্ডের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

তিনি বলেন, 'কোনো নিরপরাধের শাস্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমেই বিচারিক ভারসাম্য বজায় থাকে। তবে, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ।'

তিনি আরও বলেন, 'শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্যরা অপরাধ থেকে বিরত থাকতো। কিন্তু, সত্যিকার অর্থে এই ধরনের উদাহরণ স্থাপন করা যায়নি।'

Comments