শিকারিকে ছেড়ে দিয়ে পরিযায়ী পাখি ভাগ-বাঁটোয়ারা, বনপ্রহরী প্রত্যাহার

মৌলভীবাজারের বড়লেখার হাকালুকি হাওরে অর্ধশতাধিক পরিযায়ী পাখি শিকারিকে ছেড়ে দিয়ে পাখি ভাগ-বাঁটোয়ারার যে অভিযোগ উঠেছিল, প্রাথমিকভাবে তার প্রমাণ পেয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
পরিযায়ী পাখি
হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত চারপাশ। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের বড়লেখার হাকালুকি হাওরে অর্ধশতাধিক পরিযায়ী পাখি শিকারিকে ছেড়ে দিয়ে পাখি ভাগ-বাঁটোয়ারার যে অভিযোগ উঠেছিল, প্রাথমিকভাবে তার প্রমাণ পেয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

এ ঘটনায় হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (মৌলভীবাজার) সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র আজ বুধবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, 'হাকালুকি হাওরে পাখি শিকার করে ভাগবাটোয়ারার ঘটনাটি তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতাও মিলেছে। শিগগির আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।'

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের বিষয়টির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো। এ ছাড়া, পাখি শিকারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এদিকে হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের ঘটনাটি তদন্তে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনও ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দ্য ডেইলি স্টারে গত ১৫ জানুয়ারি 'শিকারিকে ছেড়ে দিলেন বনপ্রহরী, পরিযায়ী পাখি ভাগ করে নিলেন জনপ্রতিনিধিরা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি তদন্তে এই কমিটি গঠন করা হয়। ৩ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইনকে।

কমিটির অপর ২ সদস্য হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান ও উপসহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) মঈন উদ্দিন। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজ বিকেলে বলেন, 'গতকাল মঙ্গলবার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।'

সম্প্রতি হাকালুকি হাওরের একটি বিল থেকে তালিমপুর ইউপির মুর্শীবাদকুরা গ্রামের মো. হুসেন আহমদ বিষটোপ দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিযায়ী পাখি শিকার করেন বলে অভিযোগ উঠে। গত শনিবার সকালে তিনি পাখিগুলো বস্তায় ভরে স্থানীয় কাননগোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। খবর পেয়ে হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন পাখিসহ হুসেনকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যান। পরে তাদের সামনে 'ভবিষ্যতে এ ধরনের গর্হিত কাজ করবেন না' মর্মে হুসেন মুচলেকা দেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শিকারিকে ছেড়ে দেওয়ার পর পাখিগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। তবে পাখি শিকারি হুসেনের কাছ থেকে আদায় করা লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার সকালে মো. হুসেন আহমদ নিজের জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে ৩টি মরা পাখি পড়ে থাকতে দেখেন এবং তা বস্তায় ভরে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন তাকে আটক করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অর্ধশতাধিক পাখি হত্যা করা হলেও শিকারিকে বাঁচাতে প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন। এ ঘটনার পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন প্রায়ই পাখি শিকারে জড়িত কাউকে আটক করলে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেন।

Comments