নারায়ণগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে নারীকে অ্যাসিডে ঝলসে হত্যার অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক নারীকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতনের পর অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে হত্যা করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। গত রোববার দুপুরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনি মারা যান।
মারা যাওয়া ফাতেমা (৩১) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকার মৃত মোসলেহ উদ্দিন সরদারের মেয়ে।
ফাতেমার মা নাসিমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোববার দুপুরে তার মেয়ের শ্বশুর আলী আহাম্মদ মোবাইল ফোনে জানান, তার মেয়ে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। দুপুর তিনটার দিকে সে হাসপাতালে মারা গেছে। কিন্তু সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে বার্ন ইউনিটে তার লাশ পাওয়া যায়। বাথরুমে পড়ে গেলে লাশ বার্ন ইউনিটে কেন, এই প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো জবাব দিতে পারেননি।
নাসিমা বলেন, 'খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার মেয়ে গত ৯ মার্চ থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিল। শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের কিছু জানায় নাই। মারা যাওয়ার পর জানাইছে। দাফনের সময় লাশ গোসল করানোর সময় পুরো বুক ঝলসানো অবস্থায় পাই। ধারণা করতেছি, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় অ্যাসিড দিয়া ঝলসাইয়া মারছে আমার মেয়ের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।'
ফাতেমার স্বজনরা জানান, ২০০৮ সালে ফতুল্লার লালপুর এলাকার আলী আহাম্মদের ছেলে আরিফ হোসেনের সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে হয়। তাদের ১২ বছরের এক ছেলে এবং ৬ বছরের একটি মেয়ে আছে। ফাতেমার স্বামী মাদকাসক্ত। তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন ফাতেমাকে নির্যাতন করত।
ফাতেমার মা বলেন, 'দুই মাস আগেও ফাতেমার স্বামী দুই লাখ টাকা যৌতুক চাইছিল। আমি গরিব মানুষ, এত টাকা কেমনে দিতাম? টাকার জন্য মেয়েটারে খুব মারছেও। পুরা শরীর কালো দাগ পইরা গেছিল। এই যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মেয়েটারে অ্যাসিডে ঝলসাইয়া মারছে।'
ফাতেমার খালাতো ভাই মাহবুব হাসান সোমবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোববারই ফতুল্লা থানায় গিয়ে আমরা অভিযোগ জানাইছিলাম। থানা থেকে বলছিল ময়নাতদন্তের কাগজ লাগবো। লাশ দাফনের পর এখন আমরা আবার থানায় যাচ্ছি মামলা করতে।'
জানতে চাইলে অভিযোগটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই নারী দগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার দুপুরে তিনি মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে অ্যাসিডে ঝলসানোর বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এই বিষয়ে তদন্ত চলছে।'
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক দিপু।
Comments