হাটহাজারিতে হেফাজত তাণ্ডব

২ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি, মামলা প্রত্যাহারের ‘আশ্বাসের’ দাবি হেফাজত নেতাদের

হাটহাজারী
হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের কর্মীদের সংঘর্ষ। স্টার ফাইল ফটো

দুই বছর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ থেকে দুই দিনের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের করা কোনো মামলারই তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

মামলাগুলোর বিষয়ে চট্টগ্রামের শীর্ষ দুই হেফাজত নেতা জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে আইন অনুযায়ী মামলার তদন্ত চলছে।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ পুলিশের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের সহিংসতায় তিন মাদ্রাসা ছাত্রসহ ৪ জন নিহত হয়। হেফাজত কর্মীদের হামলায় হাটহাজারী মডেল থানা, ডাকবাংলো ও রাস্তার পাশের দোকান ভাঙচুর এবং উপজেলা ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার সময় এক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারসহ দুই পুলিশ সদস্যকে অপহরণ ও মারধর করে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আটকে রাখা হয়।

দফায় দফায় সংঘর্ষে হাটহাজারী মাদ্রাসা ও এর আশেপাশের এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

ঘটনার পর, পুলিশ ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪০০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে এবং হেফাজতের শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১৪৮ নেতার নাম উল্লেখ করে কমপক্ষে ১০টি মামলা হয় হাটহাজারী থানায়।

হাটহাজারী থানা সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত মামলায় প্রায় ৮০ জন হেফাজত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মামলার বর্তমান অবস্থা এবং আসামিদের কবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বলেন, 'সরকারের তরফ থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা প্রকৃত হামলাকারী তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হোক আমরা তাদের বলেছি।'

মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে থাকা হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে বা যারাই এই তাণ্ডবের সাথে সরাসরি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের বলা হয়েছে মামলা প্রত্যাহার করা হবে।'

ফৌজদারি মামলা যদি প্রত্যাহার করা না হয় এমন প্রশ্নের জবাবে নোমান ফয়েজী বলেন 'যদি সরকারের আশ্বাস কাজ না করে, তাহলে আমরা বিকল্প কথা ভাবব। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসছেন। তিনি মাদ্রাসা পরিদর্শন করবেন। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো আবারও তার সামনে তুলে ধরব।'

হাটহাজারীতে তাণ্ডবের ঘটনাসহ ১৩টি মামলায় নোমান ফয়েজীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগন্যালে তদন্ত ধীরগতিতে এগুচ্ছে। তবে হেফাজত নেতাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ।

তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত চলছে। মামলার অনেক এজাহার নামীয় আসামিকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে লুকানোর কিছু নেই। আইন অনুযায়ী তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।

তবে এসপি বলেন, বর্তমানে হেফাজত অনেক গোছানো এবং পরিণত আচরণ করছে, আগের মতো উশৃঙ্খল নেই।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ বৃহস্পতিবার আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা (যা হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা নামে পরিচিত) এবং ফটিকছড়ির জামিয়া ইসলামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুর মাদ্রাসা পরিদর্শন করবেন।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নানুপুর মাদ্রাসা ও হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ইফতার মাহফিলে যোগ দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে নিরাপত্তাসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Shammo murder: JCD blocks Shahbagh demanding justice

The protesters also demanded the resignation of the VC and proctor of Dhaka University

38m ago