বেলজিয়ামের সাবেক রাষ্ট্রদূত সানাউলের পরিবারের জালিয়াতি তদন্তের নির্দেশ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বেলজিয়ামের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের পরিবারের জালিয়াতি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এই নির্দেশ দেন।
গত ৩০ মার্চ দেওয়া এই নির্দেশ আজ মঙ্গলবার প্রকাশ হয়। আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩০ মার্চ ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকার সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা ও ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৫ মের মধ্যে তাদের ব্যবস্থাগ্রহণ সম্পর্কে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের ছেলে ইরতেফা মামুন ও সুমন ইফাত মামুন, মেয়ে তাসনিম জাফরুল্লাহ, তৃণা রুবাইয়া মামুন ও সাইদা হুসাইনী মামুন।
গত বছর সানাউল হকের বড় ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ইরতেফা মামুনের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্ব চেয়ে ঢাকার জেলা জজ আদালতে মামলা করেন তার বোন তাসনিম জাফরুল্লাহ। যেখানে সানাউল হকের নাম লেখা হয় প্রয়াত এ এম সানাউল হক।
এর আগে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ওই ছেলের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্ব দাবি করে তিনি ২০১৫ সালে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলার রায় নিয়ে গুলশানের একটি বাড়ি ২০১৫ সালে নিজেদের নামে নিয়ে বিক্রিও করে সানাউল হকের পরিবার।
পরবর্তীতে ধানমন্ডির আরেকটি বাড়ি বিক্রি করার জন্য ২০২২ সালে আবেদন করলে নথি দেখে বিচারকের সন্দেহ হলে জানতে চান সানাউল হকের বিস্তারিত পরিচয়। শুরুতে তারা পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে স্বীকার করেন এই সানাউল হকই ছিলেন ১৯৭৫ সালে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত।
দুই মামলার নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িটির দাবিদার সানাউল হকের পরিবারের ৫ সদস্য। গুলশান ও ধানমন্ডির দুটো জমিই তারা পান আইয়ুব খানের শাসনামলে। তবে এরইমধ্যে গুলশানের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন নাম পাল্টে ধানমন্ডির বাড়িটি বিক্রি করতে পারলে হয়ত পুরোপুরি দেশ ছাড়বেন তারা।
পরের মামলায় আদালত আদেশে লেখেন, ইতিপূর্বে গুলশানের বাড়ি বিক্রি করে প্রতিবন্ধী ভাইয়ের স্বার্থ রক্ষা করেছেন কি না, বা ওই টাকা কী কাজে ব্যয় করা হলো তার কোনো তথ্য বা হিসাব বিবরণী আদালতে বা সমাজসেবা কার্যালয়ে দাখিল করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও দুর্নীতি হয়েছে কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা অতিথি হিসেবে ছিলেন বেলজিয়ামের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বদলে যান সাবেক রাষ্ট্রদূত সানাউল হক।
খন্দকার মোশতাকের সহযোগী সানাউল হককে অত্যন্ত স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তিনি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে বার বার উঠে এসেছে বেলজিয়ামের বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেওয়ার কথা।
Comments