কারাগারে ‘পাপিয়ার’ নির্যাতনে আহত রুনা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন

কারাগারে ‘পাপিয়ার’ নির্যাতনে আহত রুনা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন
রুনা লায়লা ও বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া।

গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দি বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার মারধর ও নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা মুমূর্ষু অবস্থায় এখন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন। 

রুনার বোন রওশন আরা হাসপাতাল থেকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোগীর অবস্থা এখনো খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না।'

পরিবারের দাবি, কারাগারের মারধরের শিকার হওয়ার পর থেকে রুনা অসংলগ্নভাবে কথা-বার্তা বলছেন।

আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় রুনাকে কাতরাতে দেখা গেছে।

তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক শামসুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোগীর শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা গেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্টগুলো আসার পর রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।'   

রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা গ্রামের আব্দুল করিমের বোন। 

রুনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৭ জুন শনিবার সকাল ৫টায় মাইকিং করে আমাকে কারাগারের বিচার বৈঠকে যেতে বলে। সকাল ৯টায় বিচার বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি ময়লা পরিষ্কার করতে যাই। বিকেল ৪টায় থালা-বাসন পরিষ্কার করি। বিকেলে আমাকে আমার কক্ষ থেকে বদলি করে পাপিয়ার অধিনে ৪০১ নম্বর কক্ষে দেওয়া হয়।'  

রুনা লায়ালা জানান, পরদিন রোববার ভোর ৫টায় সোনালী নামে একজন মাইকিং করে তাকে বিচার বৈঠকে আসতে বলে। তিনি যেখানে যাওয়ার পর আবার উপরে উঠেন টয়লেটে যাওয়ার জন্য, এরপর তার নামতে দেরি হয়।

রুনা বলেন, 'এটাই ছিল আমার অপরাধ। সকাল ৭টার দিকে ফাতেমা নামে একজন আমাকে ডেকে নেয়। ফাতেমা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমি আত্মরক্ষার্থে হাতের লাঠি ফেরানোর চেষ্টা করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আরও মারধর শুরু করে। কিছুক্ষণ পড়ে একটা হাতুড়ি নিয়ে আসে। আমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমি পড়ে যাই। পড়ে যাওয়ার পর লাথি মারে।' 

'হঠাৎ ছালমা এসে হাজির হয়। ছালমা এসে আমার পরনের কমলা রঙের জামাটা ছিড়ে ফেলে। এমন অবস্থায় আমি পালানোর চেষ্টা করি। পালাতে গিয়ে পড়ে যাই। আমাকে ওরা ধরে নিয়ে আসে।' 

নাজমা ও মিনা নামে দুজন গিয়ে তাকে হাতকড়া পড়তে বলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি ভয় পেয়ে হাতকড়া পড়তে চাই না। আমাকে জোর করে হাতকড়া পড়ায়। হাতকড়া পড়িয়ে আমাকে একটা নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে।' 

'আবার আমাকে বিচার বৈঠকে নিয়ে আসে। সেখানে দুদিকে ২ হাত উপরে তুলে লোহাড় শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়। পাপিয়া এসে পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন কারাগারের সবাই আমাকে উঁকি দিয়ে দেখে। আমি আমার শরীর ঢাকতে চেষ্টা করি।' 

'পাপিয়ার পিটানিতে আমি প্রস্রাব-পায়খানা আটকাতে পারিনি। আমি তখন পানি চাই। বার বার পানি পানি করে কাঁদতে থাকি। আমাকে ময়লা পানি খাওয়ার কথা বলে। আমাকে পানি দেওয়া হয়নি। আমার মাথায় পানি ঢেলে দেয়' বলেন রুনা লায়না।

'একটা সময় পাপিয়ার আঘাতে আমি মাটিতে পড়ে যায়। মুনিয়া নামে একজন আমাকে, আমার জামা পরিবর্তনের কথা বলে ময়লা স্তূপের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। সেখানে ঘণ্টাখানেক মারধর করলে আমি আর কিছু বলতে পারি না। চেতনা ফিরে পেলে আমাকে ওরা গাছে টানায়। ওড়না দিয়ে গাছে টানিয়ে রাখে। আমি খুব অসুস্থ বোধ করি। সন্ধ্যায় জেল সুপার ওবায়দুর আমার হাতকড়া খুলে দেয়' বলেন রুনা লাইলা।
  
রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেছি।' 

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান বলেন, 'ওই নারী গোপনে ৭ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে কারাগারে আসেন। বিষয়টি পরদিন তদন্ত করে পাওয়া যায়। টাকার বিষয়ে কারাগারের হাবিলদার ফাতেমা বেগম জানতে চাইলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে কয়েকজন কয়েদি তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাকে যারা চড়-থাপ্পড় মেরেছিল, তাদের কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে।'

ওবায়দুর রহমান আরও জানান, নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago