পুরস্কৃত হলেন আসামি নির্যাতনে অভিযুক্ত ২ পুলিশ কর্মকর্তা

পুরস্কার নিচ্ছেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব এবং লালপুর থানার ওসি মো. উজ্জ্বল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরে হেফাজতে আসামি নির্যাতনে অভিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব এবং লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন জুন মাসের জন্য জেলার সেরা পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

গতকাল রোববার পুলিশ লাইন ড্রিল শেডে পুলিশ কল্যাণ সভায় সেরা সার্কেল কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ আল রাজিব এবং সেরা ওসি হিসেবে মো. উজ্জ্বল হোসেনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুর রহমান।

আজ এ ব্যাপারে এসপি সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছিল সেটা সঠিক নয়। এ ছাড়া একদিনের কোনো কাজের বিবেচনায় নয় বরং সারা মাসের কাজ এবং পুলিশ সদরদপ্তরের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) মো. রশীদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন যে তিনি বিষয়টি জানেন না এবং খতিয়ে দেখবেন।

গত ১৩ জুলাই অটোরিকশা ছিনতাই মামলায় ৩ আসামিকে আদালতে তোলা হলে জবানবন্দিতে তারা ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পরে লালপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নাটোরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত ৫ জনের মধ্যে লালপুর থানার ২ জন উপপরিদর্শক ও একজন কনস্টেবলও রয়েছেন।

এর পর ১৬ জুলাই রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা দায়রা জজ মো. শরীফউদ্দীন মামলার আদেশ স্থগিত করেন। রিভিশনের পরবর্তী শুনানির তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেন বিচারক।

অটোরিকশা ছিনতাই মামলার আসামিরা আদালতকে বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে নির্দয়ভাবে মারধর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

জবানবন্দিতে সোহাগ বলেন, থানায় নেওয়ার পরপরই তাকে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়। তার পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে মারা হয়, অণ্ডকোষে লাথি মারা হয় এবং রিমান্ডে যেতে না চাইলে বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করে নিতে বলা হয়। মো. সালাম তার জবানবন্দিতে বলেন, পুলিশ সদস্যরা তার আঙুলের ওপরে টেবিলের পায়া রেখে চাপ দিয়েছেন, কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত স্টিলের পাইপ দিয়ে পিটিয়েছেন। আরেক আসামি শামীম মোল্লা অভিযোগ করেন যে, পুলিশ তার চোখ বেঁধে টেবিলের নিচে মাথা রেখে বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড মারপিট করেছেন, দুই পা বেঁধে পায়ের পাতাতে পিটিয়েছেন ও বুকে বারবার লাথি দিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তি না দিলে আরও নির্যাতন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।

থানায় ৩ দিন আটকে রেখে আসামিদের নির্যাতনে অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করাকে অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল বলে মনে করছেন নাটোরের সচেতন মহল।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির নাটোর জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সবার আইনি সুরক্ষার অধিকার আছে। আসামিদের ২৪ ঘণ্টার বেশি থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের জন্য অভিযোগ ওঠার পর তাদেরকে পুরস্কৃত করে অপরাধে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করি। এমন কাজ পুলিশ কর্তৃপক্ষের কোনোভাবেই করা উচিত নয়।

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস আলী বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কার দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা হলো। অভিযুক্তরা তো শাস্তি পেলই না উল্টো পুরস্কৃত হলো। এতে অন্যরা এই বার্তা পেল যে এমন ঘটনায় কোনো শাস্তি হবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

1h ago