পুলিশ বলছে ‘গণপিটুনিতে’ মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ ‘প্রতিপক্ষের হাতে খুন’

বুধবার রাতে নিতাইগঞ্জে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে।

তবে পুলিশ বলছে, চিহ্নিত ছিনতাইকারী ওই যুবককে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে তিনি মারা যান।

নিহত শাহাদাত হোসেন ওরফে হাবু (৩০) নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।

গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিতাইগঞ্জের ঋষিপাড়া এলাকায় রাস্তা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি পুলিশের।

সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মরদেহের পাশ থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, 'রাতে ওই মোটরসাইকেলে চড়ে ওই এলাকায় যান নিহত শাহাদাত। স্থানীয়রা মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করেছে।'

নিহতের স্ত্রী তানিয়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ করে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিতাইগঞ্জ এলাকার কয়েকজন মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে পুরোনো দ্বন্দ্ব ছিল শাহাদাতের। প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করে বিষয়টিকে "গণপিটুনি" বলে চালিয়ে দিচ্ছে।'

ছয়মাস আগে শাহাদাতের সঙ্গে বিয়ে হয় বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার তানিয়ার। বুধবার রাতে তানিয়া বাবার বাড়িতে ছিলেন। দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্বামী খুন হয়েছেন। 

শাহাদাত শহরের নয়ামাটি এলাকায় একটি হোসিয়ারি কারখানায় চাকরি করতেন বলে জানান তানিয়া।

তিনি বলেন, 'আমার স্বামীর সঙ্গে খারাপ লোকজনের ওঠাবসা ছিল। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল। তাকে পুলিশ এর আগে গ্রেপ্তারও করেছিল। তাই বলে কাউকে এভাবে মেরে ফেলা যায় না। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমি থানায় মামলা করব।'

এদিকে নিতাইগঞ্জের ঋষিপাড়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহাদাতকে তারা হাবু নামে চিনতেন। স্থানীয়দের অনেকেই তার কবলে পড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। 

ওই দ্বন্দ্বের জেরে তিনি খুন হতে পারেন এমন আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় অনেকে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, 'রাত আনুমানিক ১টার দিকে স্থানীয় মসজিদের মাইকে এলাকায় "ডাকাত পড়েছে" বলে ঘোষণা আসে। এরপর লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন শাহাদাতের মরদেহ রাস্তায় পড়ে আছে। পাশে একটি মোটরসাইকেল ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা চন্দ্রমোহন দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাইকের ঘোষণা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি হাবুর লাশ রাস্তায়। তার সঙ্গে এই এলাকার কয়েকজনের দ্বন্দ্ব ছিল। যাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল তারাও ভালো লোক না, ক্রিমিনাল। উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারিও হইছে।'

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, নিহত শাহাদাত হোসেন ওরফে হাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, হত্যা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অন্তত ৭টি মামলা আছে।

তিনি বলেন, 'সে চিহ্নিত ছিনতাইকারী। আমরা প্রাথমিকভাবে, এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহতের ব্যাপারটি জানতে পেরেছি। তবে সে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছে কি না, এমন অভিযোগ পরিবারের লোকজন করলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।'

এই ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি।
 

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh plans to join halal economy

Bangladesh eyes stake in $7 trillion global halal economy: Ashik Chowdhury

Industry people join Bangladesh-Malaysia Chamber-organised seminar to explore Bangladesh’s potential

1h ago