প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী ৪ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গত সপ্তাহে আবাসিক ভবন থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত বুধবার তাদের এ মামলায় প্রথম আদালতে হাজির করা হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তদন্ত কর্মকর্তাকে কারা গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান গত সোমবার সন্দেহভাজন দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রতিবেদন দেন।
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, দম্পতির বাড়ির ভেতরে একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে তবে পুলিশ কোনো মেমোরি কার্ড খুঁজে পায়নি এবং মেমোরি কার্ডটি খুঁজে পেতে অভিযুক্তদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
আদালত আশফাকুল হকের কাছে ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে কোনো মেমোরি কার্ড ছিল না।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, কারাগারের দুটি গেটে পৃথক জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা এমন কিছু তথ্য দিয়েছে যা সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যাচাই করা দরকার।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আশরাফ উল আলম ও চৈতন্য চন্দ্র হালদার রিমান্ড আবেদনের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলেন, ঘটনার পরপরই আটকের পর উভয় অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে ৩৬ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে একসঙ্গে ও আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এছাড়া আদালতের নির্দেশে আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলেন, জামিনযোগ্য ধারায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে তারা জানায়, জামিনযোগ্য ধারায় দায়ের করা মামলায় নিম্ন আদালত 'অভিযুক্তকে জামিন দেবেন'।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ওই দম্পতির ফ্ল্যাটের অষ্টম তলার জানালা দিয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫) মারা যান।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে হেফাজতে নেয়।
নিহতের পরিবার বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় মামলা করলে গত বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে বিচার দাবি করেছেন প্রীতির বাবা-মা।
এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রীতির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে তার শরীরে নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ আছে।
'এই হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক ঘটনা সবার মধ্যে গভীর দুঃখ ও চরম ক্ষোভের সঞ্চার করেছে,' এই ঘটনার স্বাধীন তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
আসক এর নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতেও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এছাড়া শিশুদের গৃহকর্মে নিয়োগ বন্ধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
Comments