নরসিংদী

সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্র ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে

এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ব্যবহার করা হয় এসব অস্ত্র।
অস্ত্র হাতে শ্রমিক লীগ নেতা আমান উল্লাহ আমানের চাচাতো ভাইয়ের তিন ছেলের ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরার চরমধুয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি আমান উল্লাহ আমান স্থানীয় থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিষ্ফোরক, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ডাকাতির অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলা আছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র তৈরি এবং সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্র ভাড়া দেওয়ার অভিযোগও আছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হয় এসব অস্ত্র।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি ও ফোন কলরেকর্ড থেকে সংঘর্ষ, মারামারি বা বিশৃঙ্খলায় তার অস্ত্র সরবরাহ বা ভাড়া দেওয়ার কথা জানা গেছে। একই তথ্য উঠে এসেছে আদালতে দেওয়া আসামির জবানবন্দি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং পুলিশের বক্তব্য থেকে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাবেক এক ইউপি সদস্যের পরিবার সংঘর্ষে শ্রমিক লীগ নেতা আমানের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।

ছবি ও কলরেকর্ড

আমানের অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি ছবি ও চার মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি কলরেকর্ড সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছবিতে মহসিন, রাশেদ ও উজ্জ্বল নামে তিনজনকে দেখা গেছে, যারা আমানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে এবং তার অপকর্মের সহযোগী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আমানের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বেও আছেন উজ্জ্বল।

শ্রমিক লীগ নেতা আমান উল্লাহ আমান। ছবি: সংগৃহীত

দরজা বন্ধ একটি ঘরে তোলা সেলফিতে খয়েরি রঙে টিশার্ট পরা উজ্জ্বল (২৫) ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন, আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের জার্সি পরা মহসিন আলম (২৮) শটগান হাতে নিয়ে সেলফি তুলছেন, পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন রাশেদ মিয়া (২২)। আরেকটি ছবিতে বিছানার উপর আরও তিন-চারটি অস্ত্র দেখা যাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কলরেকর্ডে মহসিন ও চরমধুয়া এলাকার শাহীন মিয়াকে কথা বলতে শোনা গেছে। কথোপকথনে শোনা যায়, আগামী নির্বাচনে আমানের চেয়ারম্যান পদ প্রায় নিশ্চিত। মহসিন ও শাহীন বাঁশগাড়িতে মারামারি করতে রাতের বেলা আমানের অস্ত্র দিয়ে আসে। বাঁশগাড়ি, মির্জাচরে তাদের দল এখন বিজয়ী হিসেবে আছে। তাদের বললে তারা জিনিসপত্র (অস্ত্র) নিয়ে চলে আসবে। নির্বাচনের আগে কিছু করা যাবে না। তিন-চারটা অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে গেলে কেউ সামনে আসবে না।

কলরেকর্ড থেকে আরও জানা যায়, তারা অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মারামারিতে অংশ নেন এবং অন্য গ্রুপের জন্যও অস্ত্র সরবরাহ করেন।

তবে এই কথোপকথন কবে রেকর্ড করা হয়েছে এবং তারা কোন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা বলছেন, ওই কলরেকর্ড ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্রের ছবি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রায়পুরা ও নরসিংদী সদর উপজেলায় আধিপত্য নিয়ে চরাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা লেগেই থাকে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো একে অপরকে অস্ত্র, গুলি, লোকবল দিয়ে সাহায্য করে।

নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী, মাধবদীর চরদিঘলদী ও রায়পুরা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিলক্ষা, বাঁশগাড়ী, শ্রীনগর, মির্জাচর, পাড়াতলি, চাঁনপুর ও চাঁন্দেরকান্দিতে এমন ১৮টি গ্রুপ আছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

অস্ত্র-লোকবল ভাড়া করে সংঘর্ষ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোকবালী ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু পাশাপাশি ইউনিয়নগুলো একে অপরের সঙ্গে অঘোষিত জোট বেঁধেছে, তাই এক এলাকায় মারামারি হলে অন্য এলাকার জোটের লোকজন অস্ত্র ও লোকবল দিয়ে সহায়তা করে। বিনিময়ে টাকা দিতে হয়। যেহেতু প্রতিপক্ষ গ্রুপ ভাড়াটে লোকজন দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে, তাই তাদের প্রতিহত করতে আমাদেরও ভাড়াটে লোকজনের ওপর নির্ভর করতে হয়।'

গত ১৩ মার্চ আলোকবালীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আসাদ উল্লাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দীপু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হন।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদ উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি জানতে পেরেছি চরমধুয়ার পেশাদার সন্ত্রাসী আমান উল্লাহ আমানের অস্ত্র ও লোকজন দিয়ে এলাকায় আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়েছে।'

এর আগের বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচনী সহিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আলোকবালীতে তিন জন, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি জাফর ইকবাল মানিক, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাঁশগাড়ী সাবেক ইউপি সদস্য মো. স্বপন আহমেদ ও আরও বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

নিহত স্বপনের স্ত্রী রিনা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাঁশগাড়ি এলাকায় কোনো ঝামেলা হলেই চরমধুয়া এলাকার আমান উল্লাহ ও তার লোকজনকে জড়িত থাকতে দেখা যায়। তিনি আমার স্বামীকে হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার অস্ত্র দিয়েই আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এখানে বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে একটির সঙ্গে অনেকটা জোট বেঁধে সংঘর্ষে অংশ নেন আমান ও তার লোকজন।'

গত বছরের ২৫ জুলাই সদর উপজেলার আলোকবালীর খোদাদিলা গ্রামে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক জয়নাল আবেদিনের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে নীলক্ষার হরিপুর গ্রামের নাজমুল শিকদারকে (২৪) শটগানসহ আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।

নরসিংদী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাজমুলের দেওয়া জবানবন্দির থেকে জানা গেছে, ওই সংঘর্ষের জন্য নীলক্ষা থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে যুবলীগ নেতা জাকিরের পক্ষে ভাড়া করা হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় পুলিশের বিট অফিসার (বাঁশগাড়ি বিট) এসআই আপন কুমার মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রায়পুরার ছয়টি ইউনিয়নে দৃশ্যমান দুইটি গ্রুপ আছে। এক এলাকায় মারামারি হলে অন্য এলাকার লোকজন তাদের সহায়তা করে এবং তারা পরস্পর গ্রুপ মেইনটেইন করে।'

'আমান উল্লাহ আমানও একটি গ্রুপ মেইনটেইন করে। তাই বিভিন্নভাবে তিনি তার সমর্থিত গ্রুপকে সাহায্য করবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই চরাঞ্চলগুলোর নিয়মে পরিণত হয়েছে,' বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

চরাঞ্চলে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আগে টেঁটার ব্যবহার হলেও এখন আগ্নেয়াস্ত্র ও হাতবোমার ব্যবহার বেড়েছে। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও হাত বোমা তৈরি করা হচ্ছে।

১২ মামলার আসামি আমান জামিনে

রায়পুরা থানা সূত্র ও পুলিশ কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিক লীগ নেতা আমানের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্য বহনের অভিযোগে ১০টি, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-হামলা, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে আরও একটি করে মামলা আছে।

গত বছরের ১১ জানুয়ারি আমানের নেতৃত্বে চরমধুয়ার এলাকার শাহজাহান তালুকদারের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র ও বোমা নিয়ে হামলা করা হয়। এ সময় শাহজাহান আহত হন এবং তার বাড়ি ও দোকানে লুটপাট করা হয়। 

এসব ঘটনায় করা মামলায় আমানকে রায়পুরা থানা পুলিশ ছয়বার গ্রেপ্তার করে। আমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন এবং তিনি বর্তমানে জামিনে আছেন বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।

অস্ত্র সরবরাহ সংশ্লিষ্ট ছবি ও কলরেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আমানের ভাতিজা মহসিন, রাশেদ ও উজ্জ্বল গা ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে মহসিন গত সপ্তাহে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এলাকাবাসীর কাছে কলরেকর্ড ও হাতে অস্ত্র নিয়ে ছবি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং যড়যন্ত্র করে এসব কেউ ফাঁস করেছেন বলে দাবি করেন।

এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি, অস্ত্র ভাড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরমধুয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ নেতা আমান উল্লাহ আমান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৭ সাল থেকে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় তারা আমাকে বিভিন্নভাবে যড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আমি নির্দোষ, ষড়যন্ত্রের শিকার।'

ছড়িয়ে পড়া অস্ত্রের ছবি ও কলরেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তারা আমার ভাতিজা। কিন্তু তারা প্রায় পাঁচ মাস আগে দেশের বাইরে চলে গেছে। নিজের ছেলের বিষয়ে গ্যারান্টি দেওয়া যায় না, ভাতিজার বিষয়ে কীভাবে গ্যারান্টি দেব। তারা কার অস্ত্র হাতে নিয়ে ছবি তুলছে, তা জানতে পারিনি।'

সাবেক ইউপি সদস্য স্বপনকে গুলি করে হত্যার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শ্রমিক লীগ নেতা আমান বলেন, 'বাঁশগাড়ির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকিরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় স্বপন হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমার কোনো অস্ত্র নেই, ভাড়া দেওয়ারও সুযোগ নেই।'

যোগাযোগ করা হলে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন ভূইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছবি ও অডিও ভাইরাল হবার খবরটি শুনেছি। আমানের বিষয়ে থানা শাখা শ্রমিক লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলব। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের নামে কেউ অপকর্ম করলে দল তার দায় নেবে না। দলের নামে এসব অপকর্ম করার সুযোগ নেই।'

প্রশাসনের ভূমিকা

স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে সেগুলো নিয়ে তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তবে, অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যায়নি। এ কারণে বিনা বাধায় সবার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্র।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গত আট মাস ধরে নরসিংদীতে আছি, এখানে অস্ত্র নিয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষের কোনো ঘটনা দেখিনি।'

১৩ মার্চ আলোকবালীর সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আলোকবালীতে ১৬ জন আহত হওয়ার ঘটনার মধ্যে অধিকাংশই হাত বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হয়েছেন।'

অস্ত্রসহ ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি বলেন, 'ছড়িয়ে পড়া ছবিটির বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। যারা ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' 

পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, 'পুলিশ জেলায় অস্ত্র উদ্ধারে বেশ তৎপর রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমাদের উল্লেখযোগ্য সফলতাও রয়েছে। তারপরও আমরা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

US wants to rebuild trust with Bangladesh: Donald Lu

The US wants to rebuild trust with the people of Bangladesh, US Assistant Secretary of State for South and Central Asia Donald Lu said today

27m ago