মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীকে মারধরের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ

মিল্টন সমাদ্দার
মিল্টন সমাদ্দার। ছবি: সংগৃহীত

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গত ১৫ই এপ্রিল সাভার মডেল থানায় একটি মামলা হয়।

মামলাটি করেছিলেন স্থানীয় রাজাসন এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন চৌধুরী।

অভিযোগে বলা হয়, বাহেরটেক এলাকায় মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের পাশেই একটি রাস্তা দখল করেন মিল্টন সমাদ্দার। ওই রাস্তা দিয়ে শামসুদ্দিনের জমিতে যেতে হয়।

রাস্তা দখলের কারণ জানতে চাইলে গত ১০ এপ্রিল মিল্টন সমাদ্দার ও তার সহযোগীরা শামসুদ্দিনকে আটকে মারধর করে।

এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লা বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

শামসুদ্দিন চৌধুরীর করা মামলায় বলা হয়, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের পাশেই শামসুদ্দিনের একটি জমি আছে। ওই জমিতে যাওয়ার ৬ ফুট রাস্তা মিল্টন সমাদ্দার কাঠের বেড়া দিয়ে দখল করেন। 
রাস্তাটি দখল করার কারণ জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দার, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মী বিধান সমাদ্দার, দেবাশীষ সমাদ্দার, আলমগীর ও কিশোর বালাসহ অজ্ঞাত ১২ জন শামসুদ্দিনকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করে। 

শামসুদ্দিনের সঙ্গে থাকা ফয়েজ আহম্মেদ ও গাড়িচালক আশরাফ উদ্দিনকেও মারধর করেন তারা। মারধরের একপর্যায়ে তারা শামসুদ্দিনের গলা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেন।

পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল্লা বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শামসুদ্দিন চৌধুরীকে ১০ এপ্রিল মারধর করা হয়। তিনি মামলা করেন ১৫ এপ্রিল। ওই মামলায় মিল্টন সমাদ্দারসহ এজাহারনামীয় সব আসামি জামিনে আছেন।'

'মামলার তদন্তে গিয়ে ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা অজ্ঞাত আসামিদের সনাক্তের চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

মিল্টন সমাদ্দার প্রতিষ্ঠিত চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ভবন। ছবি: স্টার

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাহেরটেক এলাকার মিল্টন সমাদ্দারের মালিকানাধীন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার পরিদর্শন গিয়ে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার কোনো কর্মচারী ও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

প্রতিষ্ঠানটিতে কতজন রোগী বা কর্মী আছে, সে বিষয়েও কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তারা। 

ভবনটির ভেতরেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না গণমাধ্যমকর্মীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের এক কর্মী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত চলছে, সেহেতু আমরা কোনো তথ্যই এই মুহূর্তে দেব না।' 

স্থানীয়দের কাছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫০ বছর বয়সী এক নারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাদের (মিল্টন সমাদ্দার) কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা তেমন জানি না। তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না, মেশেন না। স্থানীয়দের তারা মূল্যায়ন করে না। এজন্য আমরা তাদের ওখানে যাই না।' 

স্থানীয় নন্দন রোজারিওর স্ত্রী শিল্পী রোজারিও দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাড়ির পাশেই মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের প্রতিবেশীই মনে করে না। গত পহেলা মার্চ ঘটা করে প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু স্থানীয় কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।'
 
'ওই প্রতিষ্ঠানে কতজন রোগী কিংবা কতজন স্টাফ আছে, এটাও বলতে পারবে না। স্থানীয় কাউকেই প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি দেওয়া হয় না। যারা চাকরি করে তারা মিল্টন সমাদ্দারের নিজস্ব লোক। তাদের একটা নিজস্ব কবরস্থান আছে। সেখানে রাতে কবর দেওয়া হয়, দিনে কবর দেওয়া হয় না,' বলেন তিনি।

শিল্পী রোজারিও আরও বলেন, 'সামন্ত কস্তার জমিতে জোর করে ঘর তৈরি করেছিল মিল্টন সমাদ্দার। পরে স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে সেই ঘর সরানো হয়েছে। মূলত তারা (মিল্টন সমাদ্দার) যে বাইরে থেকে এসেছে, এটা তারা মনেই করে না। তারা নিজেদের স্থানীয় মনে করে, আর স্থানীয়দের বহিরাগত মনে করেন।' 

Comments

The Daily Star  | English

Riyad-led gang forcibly took cheques of Tk 5cr from another ex-AL MP

The cheques police recovered from the house of Riyad worth around Tk 2.25 crore belonged to former AL lawmaker Abul Kalam Azad

2h ago