শরীয়তপুর

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে ছুরিকাঘাত, বাঁচাতে গিয়ে আহত আরও ৩

ছবি: মো. সিফাত মাদবর

শরীয়তপুরে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনের ওপর ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা করা হয়েছে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরও তিন সাংবাদিক আহত হন।

আহতরা হলেন নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস ও দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ।

আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে শরীয়তপুরে দৈনিক সমকালের জেলা কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

পুলিশ, সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন সুজনসহ জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে, 'দৈনিক গহিনের সংবাদ' নামে নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে ওই চিকিৎসকের পক্ষে একটি প্রতিবেদন করেন নুরুজ্জামান শেখ। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে নুরুজ্জামানের সঙ্গে সুজনসহ বেশ কয়েকজনের সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়।

স্থানীয়রা জানান, আজ দুপুরে সুজন তার অফিসে যাওয়ার পথে নুরুজ্জামান শেখ, তার ভাই শামীম শেখ, পালং মেডিকেল সেন্টারের মালিক ইব্রাহিম মোল্লা, তার ছেলে জিহাদ মোল্লাসহ ১০ থেকে ১২ জনের হামলা শিকার হন। ছুরি ও হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা করা হয়। এ সময় সুজনকে ধরে রাখেন নুরুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা সুজনকে বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।

সুজনের বাম কানে হাতুড়ির এবং পিঠের ডানপাশে ছুড়ির আঘাত লেগেছে।

সুজনকে বাঁচাতে এলে অনি, নয়ন ও আকাশের ওপরও হামলা চালায় নুরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা।

একপর্যায়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে নুরুজ্জামানসহ হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান এবং আহত চার সাংবাদিককে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

গুরুতর আহত অবস্থায় সুজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংবাদ প্রকাশের জেরে আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও হলুদ সাংবাদিক নুরুজ্জামান শেখ। তিনি আমাকে মারার জন্য সমকাল অফিসের নিচে চায়ের দোকানে তার সহযোগীদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। আমি আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাতুড়ি, ছুরি ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা আমার ওপর এ হামলা চালিয়েছে। সাংবাদিক সহকর্মী ও স্থানীয়রা না থাকলে আজ তারা আমাকে হত্যা করত।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নুরুজ্জামান শেখ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কারো ওপর হামলা করিনি। আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুজনসহ কয়েকজনের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয় এবং তারা আমাকে মারধর করে। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি।'

তিনি বলেন, 'আজ দুপুরে আমি সুজনের অফিসে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশ চলছিল। পরে বিএনপির কর্মীরা এসে আমাদেরকে ছাড়িয়ে দেন এবং আমি চলে আসি।'

সুজনকে ছুরিকাঘাত ও হাতুড়িপেটা করেছে কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি জানি না। আমি দেখিনি কারা তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছেন।'

এ কথা বলেই তিনি কল কেটে দেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সালাম শাহ মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাস্থলের কাছেই বিএনপির সমাবেশ হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি কয়েকজন মিলে একটি ছেলেকে (সুজনকে) মারছে। পরে আমরা এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এরই মধ্যে ছেলেটিকে হাতুড়িপেটা করা হয়। স্থানীয়দের নিয়ে ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।'

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুজন নামে আহত একজনকে দুপুরের দিকে সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাকে সম্ভবত বিভিন্ন বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে—কানের কাছে কেটে গেছে, বুকের সামনে ও পিঠের মাঝখানে আঘাতে আছে। শরীরে ধারালো বস্তুর আঘাতের দাগ এবং মারধরের কারণে হয় এমন আঘাতের দাগ আছে।'

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তথ্য পেয়ে হাসপাতালে তাদের দেখতে গিয়েছিলাম।'

তিনি বলেন, 'এ ঘটনায় সোহাগ খান সুজনের ছোট ভাই জিদনি খান অভিযোগ জমা দিয়েছেন। সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। সুজন মামলায় বাদী হয়েছেন। তিনি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন। মামলায় নুরুজ্জামান শেখসহ মোট সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago