উবারচালককে ছিনতাইকারী সন্দেহে মারধর, হাসপাতালে মৃত্যু

স্বজনের অভিযোগ, আহত হলেও চিকিৎসা পাননি রিয়াদ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ | ছবি: স্টার

মিরপুর ১২ নম্বর এলাকা থেকে গত শনিবার রাত ২টার দিকে গাড়িতে একজন যাত্রী তোলেন মিরপুরের পল্লবী এলাকার বাসিন্দা রিয়াদ হোসেন (৩৪)। যাত্রী তোলার সময় আরেকটি প্রাইভেটকার রিয়াদের গাড়িতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়, এতে এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিপূরণ আদায়ে রিয়াদ ওই গাড়িটির পথরোধ করেন এবং নিজের গাড়ি থেকে নেমে ওই গাড়ির কাছে যান। ওই প্রাইভেটকারের আরোহীরা 'ছিনতাইকারী' বলে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন রিয়াদকে আটক করে মারধর শুরু করেন। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রিয়াদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার। তার দাবি, মারধর ও পরবর্তীতে যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে।

ফারজানা জানতে পেরেছেন, মারধরে আহত হলে পুলিশ হেফাজতে রিয়াদকে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরদিন সকালে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি অভিযোগ করেন, রিয়াদকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আবারও তাকে পল্লবী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারজানা বলেন, আজ সোমবার ভোরে পল্লবী থানায় ফোন করে তিনি জানতে পারেন, রিয়াদকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখেন রিয়াদ মারা গেছেন।

'হাসপাতালের বারান্দায় রিয়াদের মরদেহ পড়ে ছিল। চিকিৎসকরা জানান, তাকে ঢাকা মেডিকেল থেকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেনাবাহিনীর সদস্যরা শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রিয়াদকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। ছিনতাইকারী সন্দেহে তাকে মারধর করা হয়েছিল। আমি তাদের (সেনা সদস্য) বলেছিলাম মামলা করতে, তারা মামলা করেনি।'

ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নজরুল।

মর্গ সূত্র জানিয়েছে, মৃতের শরীরে কোমর থেকে নিচের অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ফারজানা জানান, কয়েক মাস আগে ১৬ লাখ টাকায় একটি প্রাইভেটকার কিনেছিলেন রিয়াদ। মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় উবার সার্ভিসে রাইড শেয়ারিং ছিল তার উপার্জনের একমাত্র পথ।

'আমার স্বামীকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে মারা হয়েছে। কোনো ছিনতাইকারী ১৬ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কেনে না,' বলেন তিনি।

নজরুল বলেন, 'গাড়িটি তার কি না সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত না, তদন্ত শেষে বলা যাবে। রিয়াদের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গাড়িতে নগদ টাকা ও নারীদের ব্যবহৃত একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। হয়তো গাড়িটি ছিনতাইয়ের কাছে ব্যবহৃত হতো।'

'তিনি চিকিৎসা পাননি এর জন্য আমরা দায়ী না। আমরা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এমনকি আমরা একটি বেসরকারি হাসপাতালেও নিয়ে গেছি। কিন্তু রিয়াদকে বাঁচাতে পারিনি,' যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago