‘আমাদের মারবে, আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা’

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার স্বজনদের কাছে চাঁদা দাবি এবং মারধরের অভিযোগে দায়ের মামলা মিথ্যা উল্লেখ করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন রাজাবিরাট আদিবাসী গ্রামের সাঁওতালরা।
আজ শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে কামদিয়া বাজারের তিনমাথায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে তারা এই দাবি জানান। এতে কামদিয়া এলাকার সাঁওতাল নারী-পুরুষরাও অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজাবিরাট মানঝি প্রধান ও গাইবান্ধা আইন কলেজের শিক্ষার্থী ব্রিটিশ সরেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের মারবে, আবার আমাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা দেবে। এমন নাটক কেউ কখনো দেখেছে? সাঁওতালরা বাংলাদেশের কোথাও চাঁদাবাজি করেছে কেউ কি বলতে পারবে?'
'রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা দলিল জাল করে দীর্ঘ দিন ধরে সাঁওতালদের দুই একর জমি ভোগ-দখল করে আসছিলেন। সম্প্রতি আমরা গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে মামলা করলে চেয়ারম্যানের দলিল ভুয়া প্রমাণিত হয়,' জানান ব্রিটিশ সরেন।
তিনি আরও বলেন, 'গত ১৫ আগস্ট বিকেলে ধান লাগাতে গেলে রফিকুল ও তার ভাইয়েরা সাঁওতালদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে জমির মালিক শ্যামবালা হেমব্রম ও তার পরিবারের আরও তিন সদস্য আহত হন। সেই ঘটনায় ১৮ আগস্ট শ্যামবালা বাদী হয়ে রফিকুল ইসলাম ও আরও ১৪ জনের নামে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। অথচ পুলিশ আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।'
'একই ঘটনার জের ধরে ১৯ আগস্ট রফিকুল চেয়ারম্যানের ভাই শফিকুল ইসলাম থানায় গিয়ে ২০ জন সাঁওতাল নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সাঁওতালদের বিরুদ্ধে শফিকুলের অভিযোগ পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, হত্যার হুমকি ও মারধর করা। অথচ একদিন আগে শ্যামবালা যে মামলা দায়ের করেছেন, সেই মামলার আসামি শফিকুল ইসলাম,' অভিযোগ করেন তিনি।
ব্রিটিশ সরেন আরও বলেন, 'আমরা হামলার শিকার হলে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। কিন্তু সাঁওতালদের ভূমি দখলকারী অত্যাচারীরা থানায় মামলা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নথিভুক্ত করে।'
সাঁওতাল নেতারা সমাবেশ থেকে মামলা প্রত্যাহার, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম ও রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের অপসারণ দাবি জানান।
এক সাঁওতাল নারীকে মারধরের মামলায় রফিকুলের আরেক ভাই মেজবাউল ইসলাম গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। ব্রিটিশ সরেন অভিযোগ করেন, 'সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। তিনি আবারও সাঁওতালদের ওপর আক্রমণ করেছেন এবং বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, পুলিশ তাকে ধরছে না।'
গাইবান্ধা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক ও গাইবান্ধা জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, গত ৩ জানুয়ারি রাজাবিরাট গ্রামের এক সাঁওতাল নারীকে মারধর করে রফিকুল জেলে গিয়েছিলেন। সেই মামলায় জামিন নিয়ে বাইরে এসে আবারও তিনি সাঁওতালদের ওপর হামলা করেছেন।
'এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে আদিবাসীরা কতটা অসহায়,' বলেন তিনি।
সিরাজুল বলেন, ২০১৬ সালে এই গোবিন্দগঞ্জ সাঁওতাল পল্লীতে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি।
জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনায় চেয়ারম্যানের ভাই শফিকুল ইসলাম আহত ছিলেন। তিনি তার আত্মীয়দের মাধ্যমে থানায় সাঁওতালদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের মামলা করেন।
'তবে প্রাথমিক তদন্তে সাঁওতালদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়েছে,' বলেন তিনি।
সাঁওতালদের মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, 'আমরা আসামি ধরার চেষ্টায় আছি। এর মধ্যে কয়েকজন আসামি নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন। আর রফিকুল ইসলাম হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।'
Comments