ফরিদপুর-৩

তারা শূন্য মাঠে গোল দিতে চায়: এ কে আজাদ, চাইলে তাকে মাঠে নামতে দিতাম না: শামীম হক

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের মারধর, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগ এনেছেন।
এ কে আজাদ ও শামীম হকের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের মারধর, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগ এনেছেন।

একইসঙ্গে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন এ কে আজাদ।

সেসময় একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান এ কে আজাদ। তিনি বলেন, 'গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে নৌকার প্রার্থী শামীম হকের অনুসারী সন্ত্রাসীরা ফরিদপুর জুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে গত নয় দিনে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর ১৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা ও ১৩টি জিডি দায়ের করা হয়েছে। হুমকি, হামলার ভয়-ভীতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। মামলা-জিডি ছাড়াও প্রশাসনের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে ঈগল মার্কার কর্মী-সমর্থক এবং নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর-হামলা এবং মারধর করা হচ্ছে। ঈশান গোপালপুরে দুই দফায়, গেরদা, মাহমুদপুর, পশ্চিম গংগাবরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল সেন্টারে আগুন এবং টেপাখোলা ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর এবং মারধরে ইতোমধ্যে ঈগল মার্কার প্রায় ২০ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর ক্যাম্পে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। এসময় সন্ত্রাসীরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান ঝনকসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত করে। আব্দুর রহমান ঝনকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'

'একই দিন রাতে পশ্চিম গংগাবরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টারে আগুন দিয়েছে এবং টেপাখোলা ক্যাম্প ভাঙচুর করছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা গত কয়েকদিনে নির্বাচনী মাঠে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে। পোস্টার ছিঁড়ে ভয়-ভীতি এবং হুমকি দেখিয়ে তারা ঈগল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মাঠ ছাড়া করতে চায়। তারা চায় শূন্য মাঠে গোল দিতে', বলেন এ কে আজাদ।

তিনি বলেন, 'আমার বিপুল জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামীম হকের সন্ত্রাসীরা একেরপর এক হামলা-ভাঙচুর, মারধরের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাঙচুর এবং মারধরে ঈগল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব ঘটনায় নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। আমরা অভিযোগ করার পর যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। এমনও হয়েছে একটা এজাহার থানায় দুইদিন পড়ে থাকার পর সরকারের উচ্চ-মহলের হস্তক্ষেপে সেটিকে মামলা হিসেবে নিচ্ছে। তবে সেখানেও আসামী ধরার ক্ষেত্রে দায়সারা ভাব খুবই সংকটজনক পরিস্থিতির বার্তা দেয়।'

সংবাদ সম্মেলনে শামীম হকের অনুসারী কয়েকজনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান এ কে আজাদ।

এ কে আজাদের মতে সেই সন্ত্রাসীরা হলেন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মো. নাছির, আলীয়াবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন সম্রাট, অস্ত্র ব্যবসায়ী মোবারক খলিফা, হেলমেট বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম নাসিম, অস্ত্রবাজ ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন, জহরুক ইসলাম জনি, হাত কাটা আক্তার, অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. শাহীন মোল্লা, এজাজ খান, শওকত হোসেন ওরফে সাকো, শোয়ানুর রহমান শোহাগ, রাকিবুর রহমান রকিব, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মজনু ও আনোয়ার হোসেন আবু ফকির।

এদের নামে রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে এ কে আজাদ বলেন, 'আজকের পর ঈগল প্রতীকের কোনো কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা, মামলা এবং ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচি, মিছিল-মিটিংসহ বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।'

ফরিদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, 'আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের অভিযোগ পেয়েছি। তার অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তাদের আমরা ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা শুরু করে দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনে অন্তরায় এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোনো একক প্রার্থীকে সহযোগিতা করছি না। আইনের মধ্যে থেকে সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়াই আমাদের কাজ। আমরা সেটাই করছি।'

অপরদিকে, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক বলেন, 'আমি আমার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি যাতে তারা শান্ত থাকে।'

তিনি বলেন, 'আমি চাইলে তাকে (এ কে আজাদ) মাঠে নামতে দিতাম না। কিন্তু আমি গণতন্ত্রের প্রতি সহনশীল, পরমতের প্রতি আস্থাশীল।'
  
সংবাদ সম্মেলনে শামীম হকের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আব্দুল কাদের আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন এবং দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করার অপচেষ্টা করেছেন।

এতে বলা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর মামুদপুর, মোল্লা বাজার, বটতলায় ঈগল (এ কে আজাদের নির্বাচনী প্রতীক) প্রতীকের সন্ত্রাসী বাহিনী আসাদসহ তিন ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে, ২৫ ডিসেম্বর ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের কামরুল ও সেলিমের মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়, ২৪ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সন্ত্রাসী বাবু, বাবলু, বাইপাস সড়কে নৌকা প্রতীকের পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

এতে আরও বলা হয়, ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের এজেন্ট হিসেবে তার মালিকানাধীন দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল২৪-এ ধারাবাহিকভাবে শামীম হকের নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন যোগ্যতা নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে চলছে।

লিখিত বক্তব্য পাঠের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শামীম হক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য নির্বাচন করতেই হতো। নির্বাচনে তিনি (এ কে আজাদ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নিজের ভরাডুবির আশঙ্কায় তিনি নানা কূটকৌশল করে যাচ্ছেন।'

শামীম হক বলেন, 'বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসেছেন এ কে আজাদ। পাশাপাশি খন্দকার মোশাররফের সন্ত্রাসী বাহিনী ফারহান, মিনার, অনিক, শেখ মাহাতাব আলী, লেবি, মোকাররম বাবুকে দিয়ে সন্ত্রাসী কাজ করে যাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'আজাদ আমার ছোট ভাই। সে যখন আমার নাগরিকত্ব নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সামনে প্রশ্ন তোলে, তখন আমি বলেছিলাম- এভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে আসো আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করি। তুমি নির্বাচিত হলে ফুলের মালা তোমার গলায় পড়িয়ে দেবো। কিন্তু এ কে আজাদ তা না করে একেরপর এক আমাকে আদালতে টেনে নিয়ে গেছে, এতে আমার সময়ক্ষেপণ হয়েছে। পরে সুপ্রিম কোর্টের রায় আমার পক্ষে আসার পর গণজাগরণ দেখে ভয় পেয়ে গেছে এ কে আজাদ।'

এদিকে, এ কে আজাদের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগে শামীম হকের অনুসারী আলীয়াবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন সম্রাটকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

দুপুর ১টার দিকে সদরের আলীয়াবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর গেরদা ইউনিয়নে এ কে আজাদের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সকালে এ কে আজাদের সমর্থক ও গেরদা এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Health, education face spending cuts again

Education and health sectors are set to get less Annual Development Plan allocation than prescribed in the eighth five-year plan.

7h ago