ভোটের দিন নরসিংদীতে সহিংসতার আশঙ্কা
নরসিংদীর পাঁচটি আসনে প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের একাধিক ঘটনার কারণে ভোটের দিনে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নরসিংদীর পাঁচটি আসনে ৩৭ প্রার্থী অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে দুই প্রার্থীসহ ১১ জন নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাছাড়া দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্তত ২০টি স্থানে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
নরসিংদী-১ (সদর)
নরসিংংদীতে সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ আসনে নৌকার পক্ষে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এসএম কাইয়ুম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক আনোয়ারকে শোকজ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, চরাঞ্চল আলোকবালী ও চরদিঘলদিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে।
নরসিংদী-২
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, ভয়ভীতি, হুমকি, পোস্টার পোড়ানো, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও তার এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ.এন.এম রফিকুল ইসলান সেলিম।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জিনারদী ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এ প্রার্থীর অভিযোগ, তার দলের কর্মী-সমর্থককে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, নির্বাচনের পরে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে শোকজ করা হয়েছে। তাছাড়া এ প্রার্থীর সমর্থক ও জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকারকে ৭ হাজার দেশীয় অস্ত্র প্রস্তুত রাখার হুমকি দেয়ার অভিযোগেও শোকজ করা হয়।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাগিনা হুমায়ুন আফ্রাদের বিরুদ্ধে ভোটাদের টাকা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল।
গত জাতীয় নির্বাচনেও এ আসনে এক এজেন্টকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এবারেও এ আসনে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী)
এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন পাঁচবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শিল্পমন্ত্রীর অনুসারী দৌলতপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাদিম মাহমুদকে শোকজ করা হয়েছে।
এ আসনে একদিকে মন্ত্রী ও অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান—দুজনই তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। ফলে এ আসনেও ভোটের পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
নরসিংদী-৫
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনের ১৬৭ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৯৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রশাসন। প্রশাসনের মোট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় অর্ধেক এসব কেন্দ্রে মোতায়েন করা বলে জানা গেছে।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী টানা পাঁচ মেয়াদের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী।
ইউপি নির্বাচনে হেরে যাওয়া ২৪ ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যানরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. বদিউল আলম বলেন, 'যেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, সেখানে ভোট নেওয়া বন্ধ করে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। ভোট আগে থেকে যেন না দিতে পারে, সেজন্য সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা সত্য যে, চরাঞ্চলে প্রায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব হয়ে থাকে। সেজন্য অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় এখানে পুলিশ বেশি মোতায়েন করা হবে।'
Comments