খুলনা সিটি নির্বাচন

৫ বছরে তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ অর্থ বেড়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা

তালুকদার আব্দুল খালেক
তালুকদার আব্দুল খালেক। ছবি: দীপংকর রায়/স্টার

খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের বছরে আয় ৫৯ লাখ টাকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। 

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তালুকদার আব্দুল খালেক। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে তার সম্পদের তথ্য।

হলফনামায় দেখা গেছে, আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী দুজনেরই আয় গত ৫ বছরে অনেক বেড়েছে। বেড়েছে সম্পদের পরিমাণও। 

পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করার সময় নিজের হলফনামা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছিলেন আব্দুল খালেক। 

আগের হলফনামা এবং গত ১৬ মে জমা দেওয়া নতুন হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় নগদ টাকা ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এই ৫ বছরে তার নগদ অর্থ বেড়েছে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

আগের নির্বাচনের সময় তার স্ত্রীর টাকার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার। এখন তার নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার। 

আব্দুল খালেকের ৪টি ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। আরও আছে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর। 

৫ বছর আগে ৩টি ব্যাংকে ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ছিল ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১০ লাখ টাকার এফডিআর ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর।

তার স্ত্রীর ৫ বছর আগে দুটি ব্যাংকে ছিল ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আর এখন ৪টি ব্যাংকে আছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। 

৫ বছর আগে স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র ছিল ৪৫ লাখ টাকার ও এফডিআর ছিল ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। আর এখন সঞ্চয়পত্র আছে ৫০ লাখ টাকার।
 
মেয়রপ্রার্থী আব্দুল খালেকের অবশ্য ৫ বছর আগে এসবিএসি ব্যাংকে ২ কোটি টাকার শেয়ার থাকলেও, এখন আর সেটি নেই।   
 
কৃষিখাত থেকে খালেক বছরে আয় করেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া মেয়র হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতা বাবদ আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। 

প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। 

কৃষিখাত থেকে পাঁচ বছর আগে খালেকের আয় ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে পেতেন ৮ লাখ ৫১ হাজার। এ ছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত পারিতোষিক ও ভাতাদি পেতেন ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। 

তখন প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, যা তিনি বৈবাহিকসূত্রে পেয়েছিলেন। এখনো সেই পরিমাণ সোনাই তার আছে। পাঁচ বছর আগে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল ৭৫ হাজার টাকার আর আসবাবপত্র ছিল ৫০ হাজার টাকার। এখন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার আর আসবাবপত্র রয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার টাকার। 

তালুকদার আব্দুল খালেক এবার পেশা হিসেবে ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় নেই। পাঁচ বছর আগে জমা দেওয়া হলফনামায় পেশা হিসেবে মৎস্য ঘের ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেখান থেকে তার আয় ছিল ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা। 

স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈত্রিক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এ ছাড়া তিনি ৩ দশমিক ২১ একর কৃষি জমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমির মালিক। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর ওই বাড়ির অর্ধেক মালিক তার স্ত্রী। সেই হিসেবে স্ত্রীও ২ কোটি ১২ লাখ টাকার মালিক।

পাঁচ বছর আগে তাদের ওই বাড়িটি ছিল না। স্ত্রীর নামে রাজউকের পূর্বাচলে ২২ লাখ টাকার প্লট ছিল। এ ছাড়া জমিসহ ৫ তলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
 
সোনালী ব্যাংক খুলনার স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। 

প্রার্থী তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে আগে ৯টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ৪টিতে অব্যাহতি ও ৫টিতে খালাস পেয়েছেন তিনি।

সম্পদ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তালুকদার আব্দুল খালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অবৈধভাবে কোনো সম্পদ আয় করিনি। আমার বেতন-ভাতা হিসেবে যে আয় হয়েছে, তা দিয়েই সবকিছু করা হয়েছে। গত ২০ বছরের হলফনামা দেখে বলবেন কোথায় কোথায় আমি অবৈধ সম্পদ আয় করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

How Dhaka’s rickshaw pullers bear a hidden health toll

At dawn, when Dhaka is just beginning to stir, thousands of rickshaw pullers set off on their daily grind.

19h ago