বাংলাদেশে ৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত জুলাইয়ে

জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশে এ বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে অর্ধেকেরও কম।
ফাইল ছবি: এসকে এনামুল হক

জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশে এ বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে অর্ধেকেরও কম।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ৩০ বছরে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এ বছর জুলাইয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছর জুলাইয়ে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২১১ মিলিমিটার (মিমি), যা ১৯৮১ সালের পর সর্বনিম্ন।

অন্যদিকে গত ৩০ বছরের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪৯৬ মিমি।

২০২০ সালে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৫৫৩ মিমি, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৪৭১ মিমি, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় ৫ দশমিক এক শতাংশ কম।

দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের কিছু জাতের ফলন বৃষ্টিপাতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে এ বছর কম বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের ধান উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় জুলাইয়ে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। জুলাইয়ে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে গত ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা ৩১ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এই বছর ব্যতিক্রম আবহাওয়ার প্যাটার্নের মুখোমুখি হচ্ছি। গত ৪১ বছরের মধ্যে এই বছরের জুলাইয়ে দেশে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।'

গত জুনেও একই অবস্থা ছিল। দেশে গড় বৃষ্টিপাত ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে এবং তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আব্দুল মান্নান বলেন, 'গত ৩ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা রেকর্ড করছি এবং বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছি।'

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'এতে করে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে, বিশেষ করে কৃষি খাতে।'

 

ফসলের ওপর প্রভাব

অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। কেননা, আমন ও আউশ ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল।

কম বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষককে অতিরিক্ত পানি সেচ দিতে হচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বার্ষিক শস্য উৎপাদনের ৩৯ শতাংশ বা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টন ছিল আমান ধান।

কৃষিবিদদের মতে, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে চারা রোপণের জন্য বীজতলা তৈরির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শস্য উৎপাদন বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।

তারা জানান, মৃদু তাপপ্রবাহ কৃষক ও কৃষিবিদদের জন্যও উদ্বেগজনক। কেননা, চারা রোপণে দেরি হলে ফলন কমে যাবে।

বোরো ও আউশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার এক কোটি ৬৩ লাখ টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ লাখ ২০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৯ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ হয়েছে।

কৃষক এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে চারা তৈরি করেছেন।

অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, এ বছর চারা রোপণে দেরি হলেও এখনও সময় আছে।

তিনি বলেন, 'বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষককে সেচ দিতে হচ্ছে এবং এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তবে আমরা আশাবাদী যে এই মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।'

আউশ ও আমন বৃষ্টিনির্ভর ফসল হওয়ায় অনেক এলাকায় পানি সেচ দিতে হয়েছে উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক খাদ্য উপদেষ্টা এএমএম শওকত আলী বলেন, 'সরকার যদি সেচ নিশ্চিত না করে, তাহলে ধান উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের উচিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সেচের ব্যবস্থা করা এবং তা নিশ্চিত করা।'

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবির জানান, সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করতে অল্প পরিপক্ব জাতের চারা ১৫-২০ দিনের মধ্যে রোপণ করতে হবে। সময় পেরিয়ে গেলে ফলন কমে যাবে।

তিনি বলেন, 'বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কেবল সেচ দিয়েই ভালো উৎপাদন নিশ্চিত করা যেতে পারে। আমরা কৃষকদের সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি, কিন্তু তাদের অনেকেই বেশি খরচের কারণে তা করছেন না।'

তিনি বলেন, 'সমস্যা বহুমুখী। দেরিতে চারা রোপণ করলে উৎপাদন কমবে, আবার সেচ দিতে গেলে খরচ বাড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

Social safety net to get wider and better

A top official of the ministry said the government would increase the number of beneficiaries in two major schemes – the old age allowance and the allowance for widows, deserted, or destitute women.

4h ago