এমডির ফাউন্ডেশনে ‘ডোনেশন’ দিলে প্রকল্পের অর্থ ছাড়

রেজাউল হক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিসিটি) আওতায় থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের চেক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাস হয় না। এই চেকগুলো ছাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) 'ডোনেশন' দিতে হয়, যা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির লঙ্ঘন।

বিসিসিটির আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা প্রকল্প সংক্রান্ত চেক পাস করার জন্য রিজিয়া-আজিজ ফাউন্ডেশনের নামে 'ডোনেশন' সংগ্রহ করছেন। বিসিসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রেজাউল হক তার পিতামাতার নামে নামকরণ করা ফাউন্ডেশনটি পরিচালনা করেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে, এই ভয়ে প্রকল্প পরিচালকরা ডেইলি স্টারকে তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার চেক পাস করাতে উল্লেখিত ফাউন্ডেশনে ডোনেশন দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে বিসিসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল হক বলেন, 'জোর করে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আমি আমার বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছ থেকেও ডোনেশন সংগ্রহ করি। যে কেউ স্বেচ্ছায় ডোনেশন দিতে পারেন।'

গতকাল সোমবার রেজাউলের অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির (এলপিআর) অংশ হিসেবে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির ৯ নম্বর ধারা মতে, সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো আদেশ ও নির্দেশের অধীন ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো তহবিল সংগ্রহের জন্য বলতে বা তহবিল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করতে বা তহবিল গ্রহণ করতে পারবে না। এই আইনের লঙ্ঘনকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিসিসিটির কাছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়। বিসিসিটির লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মোকাবিলা করা এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ও সহনশীলতা তৈরিতে সহায়তা করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রভাব কমানোর জন্য বিসিসিটি প্রয়োজনীয় বলে মনে করে এমন প্রকল্পগুলোর জন্য পর্যায়ক্রমে তহবিল অনুমোদন ও বিতরণ করে।

রেজাউল হক ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিসিসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন এবং ৬৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেন।

একটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প পরিচালকরা চেক পাস করানোর জন্য বিসিসিটিতে আসলে ডোনেশন আদায় করা হয়।

বিসিসিটি সূত্র ডেইলি স্টারকে জানান, কামরুল ইসলাম নামে বিসিসিটির একজন কম্পিউটার অপারেটর এই অর্থ সংগ্রহ করতেন।

তবে কামরুল জানান, তিনি এখন আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত নন।

কামরুল বলেন, 'যখন এমডি স্যার (রেজাউল হক) প্রথম আসলেন (এই অফিসে), তিনি আমাদেরকে এ কাজের (প্রকল্পের চেক পাস করানো) জন্য টাকা আদায় করতে বললেন। যখন আমরা অস্বীকৃতি জানালাম, তখন হিসাবরক্ষণ বিভাগ এ কাজের দায়িত্ব পেল।'

তার দাবি, গত ৭-৮ মাস ধরে হিসাবরক্ষণ বিভাগ এ কাজের দায়িত্বে আছে।

বিসিসিটির অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'এ বিষয়ে এমডি স্যার ভালো বলতে পারবেন। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন। আমরা শুধু চেক পাস করাই।'

রেজাউল হক শুরুতে তার ফাউন্ডেশনে প্রকল্প পরিচালকদের ডোনেশন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে, আখতারুজ্জামান ডোনেশন আদায় করতেন কি না, জানতে চাইলে 'এ তথ্য সঠিক' বলেই জানান তিনি।

তিনি জানান, এই ফাউন্ডেশন আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়।

একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে এভাবে টাকা নিতে পারেন কি না, জানতে চাইলে এ প্রশ্নের জবাব দেননি রেজাউল হক।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি এক ধরনের চাঁদাবাজি। তহবিল বণ্টনের সময় এই টাকা আদায় করা হয়। সরকারি কর্মচারী হিসেবে তিনি এটি করতে পারেন না। এটা এক ধরনের কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। সরকারের উচিৎ এই বিসিসিটি কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।'

ডেইলি স্টার এই ফাউন্ডেশনের একটি টাকা আদায়ের রশিদের অনুলিপি সংগ্রহ করেছে। রশিদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্সি পাইকপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Violence against women, children: Over 35,000 cases unresolved for over 5 years

More than nine years have passed since a case was filed over the rape of a nine-year-old schoolgirl in Dhaka’s Khilkhet area. The tribunal dealing with the case has framed charges against the lone accused and held 96 hearings but is yet to complete the trial.

11h ago