পাহাড়ে মানুষ ভয়ভীতি নিয়ে বসবাস করছে: ঊষাতন তালুকদার

‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখছেন ঊষাতন তালুকদার। ছবি: লালটানলিয়ান পাংখোয়া/স্টার

অধিকার আদায়ে পাহাড়িদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, 'জেএসএস স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেই শান্তিচুক্তি করেছে। আমাদের আশা ছিল চুক্তির বাস্তবায়ন হবে। সবাই মিলে মিশে থাকব। এখন পাহাড়ে হচ্ছেটা কী? ঘরে বসে থাকলে অধিকার কেউ দিয়ে যাবে না।'

'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' উদযাপন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি শহরের পৌর চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

'ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশ: আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা' শীর্ষক স্লোগানে রাঙামাটিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

রাঙামাটিতে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি। ছবি: লালটানলিয়ান পাংখোয়া/স্টার

আলোচনা সভায় সরকারকে হুঁশিয়ার করে ঊষাতন তালুকদার বলেন, 'আগের মতো রাতের অন্ধকারে চুপিসারে ভোট দেওয়া যাবে না। নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছতার সাথে ও গ্রহণযোগ্য। এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান, সবাই একসাথে দেশকে গড়ে তুলব।'

অধিকার আদায়ে পাহাড়িদের তৈরি থাকার আহ্বান জানিয়ে এই জেএসএস নেতা আরও বলেন, 'সামনে কঠিন লড়াই-সংগ্রাম রয়েছে। অধিকার আদায়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। পাহাড়ে মানুষ ভয়ভীতি নিয়ে বসবাস করছে।'

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, 'বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত একটি দেশ। আইএলও কনভেশন-১০৭সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদে বাংলাদেশ সরকার অনুস্বাক্ষর করেছে। সেটি বঙ্গবন্ধুর আমলে এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার আমলে। এসব সনদে অনুস্বাক্ষর করা দেশগুলো তাদের দেশের অভ্যন্তরে আদিবাসী আছে বলে স্বীকার করেছে। কিন্তু এখন তারা দেশে আদিবাসী নেই বলছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।'

এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভাজনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে শাসকগোষ্ঠী। এ থেকে আদিবাসীদের বেরিয়ে আসতে হবে। অধিকার আদায়ে আরো সক্রিয় হতে হবে। না হলে সরকার আদিবাসীদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে না।'

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা।

এছাড়া সভায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ম্রাচাই মারমা, তঞ্চঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গা, অহমিয়া জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অনুপ কুমার আসাম, ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সাগর ত্রিপুরা নান্টু, পাংখোয়া জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জ্যোতি পাংখোয়া এবং লুসাই জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে লোমা লুসাই কথা বলেন।

তাদের ভাষ্য, এই প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সত্তা, পরিচয়, ঐতিহ্য ও ভাষা রয়েছে। ফলে 'আদিবাসী' স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকারও রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর শেষে নিজেদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিতে চান না তারা।

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩টি নৃ-গোষ্ঠীর বাস। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা পাহাড়ের এসব মানুষ নিজেদের পরিচয় নিয়ে এ দেশে বেঁচে থাকতে চান। সরকার বা অন্য কারো চাপিয়ে দেওয়া নামে নয়। নিজেদের যে সঠিক পরিচয়, তার স্বীকৃতি চান।

একইসঙ্গে 'আদিবাসী' সম্বোধন না করার সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানানো হয় সভা থেকে।

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

8h ago