চা বাগানের সুখিয়াদের দুঃখ ১২ মাস!

সুখিয়া রবিদাশ। ছবি: সংগৃহীত

চা শ্রমিক সুখিয়া রবিদাশ। মৌলভীবাজারের একটি চা বাগানের স্থায়ী চা শ্রমিক। দৈনিক মজুরি পান ১২০ টাকা। স্বামী ২ সন্তান নিয়ে এই টাকায় কষ্টে দিনানিপাত করছেন।

সুখিয়া জানান, জন্মসূত্রেই তিনি বাগানের বাসিন্দা। তার মা-বাবাও এই বাগানের শ্রমিক ছিলেন। এখন তিনি ও তার স্বামী কাজ করেন। ৬ জনের সংসার তাদের।

কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রোইদে পুইড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিন কাম কইরে নগদ হাজিরা পাই মাত্র ১২০ টেকা। সবকিছুর দাম বাইড়ে যায়, হামাদের কামের দাম নাই বাড়ে। এই ১২০ টেকায় তো এখন ২ কেজি চালও হয় না। আর একলিটার সোয়াবিন তেল তো পাওয়ায় না যায়। এই টেকায় কেমনে সংসার চালাবো?'

ন্যূনতম মজুরি ৩০০ টাকার করার দাবিতে আজ চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে কাজে যোগ না দিয়ে আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করেছেন তারা। এর আগে মঙ্গলবার দেশের ১৬৭টি চা বাগানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতির এই কর্মসূচি শুরু হয়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে একযোগে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্র ও বিভিন্ন ভ্যালি।

চা শ্রমিক মিনা কৈরি বলেন, 'প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে, ৩ বছর পরও আমাদের মজুরি একই আছে।'

আরেক শ্রমিক সবিতা গোরাইত বলেন, 'আমাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য দৈনিক মজুরি অবশ্যই ৩০০ টাকা করা উচিত।'

মৌলভীবাজারের লুহাইউনি চা বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি অজিত কৈরি বলেন, 'চা শ্রমিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা চিরকাল চলতে পারে না।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, 'আমরা আইন মেনেই আন্দোলন করছি। ৭ দিন আগে দাবি না মানলে আন্দোলনে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। প্রায় ১৯ মাস ধরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে যখন হঠাৎ তেলের দাম বাড়লো, পরদিন থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা বাস বন্ধ করে ভাড়া বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করেন। এগুলো যদি আইন ভাঙা না হয়, আমাদেরটা কীভাবে হয়? চা-শ্রমিকেরা কী নিদারুণ কষ্টে আছেন, তা মালিকপক্ষ ও সরকারকে বোঝা উচিত। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল। আজকের মধ্যে দাবি না মানলে শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলন হবে।'

বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা আন্দোলনে গেলে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সমঝোতার বৈঠক করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৮ আগস্ট তাদের সঙ্গে বসতে সময় চেয়েছেন। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সেটা মানেনি।'

বিসিএসইউ ও বিটিএ'র মধ্যে চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট (যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় এ শ্রেণির বাগানর জন্য ১০২ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১০০ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ৯৯ টাকা। বিসিএসইউ ও বিটিএ'র মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সই হয় ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর (যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় এ শ্রেণির বাগানর জন্য ১২০ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৮ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৭ টাকা ।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

2h ago