অক্সফোর্ড থেকে বিশ্ব গার্ল গাইডসের নির্বাহী সদস্য, যেভাবে সফল ফারিবা

মাহনাজ হোসেন ফারিবা। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই দেশের জন্য; বিশেষ করে দেশের মেয়েদের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন মাহনাজ হোসেন ফারিবা। তখন থেকেই তার কাজ শুরু হয় গার্ল গাইডসের সঙ্গে। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি সংগঠনের হয়ে বিদেশ সফরও করেন।

ফারিবার এমন সফলতার গল্প অনেক। সবশেষ গল্পটি হলো—সম্প্রতি তিনি বিশ্বের ২৬টি দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ব গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটস সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ পেয়েছেন।

এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা ছিল ৯টি দেশের মধ্যে। সেখানে ভারত, পাকিস্তান ও তাইওয়ানকে হারিয়ে বাংলাদেশের হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন ফারিবা।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহনাজ হোসেন ফারিবা। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ১৪তম এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি এই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৬টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে ফারিবা নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফারিবার সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। ওই কথোপকথনে উঠে এসেছে তার পথচলার নানা অনুষঙ্গ।

ফারিবার ভাষ্য, 'জীবনে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো সবকিছুর ভারসাম্য বজায় রেখে চলা। যখন যে কাজটি করার, তা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। কখনো সময়ের অপচয় করা যাবে না। কোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকলে সফলতা অবশ্যই আসবে। আমরা যদি একদিন বাঁচি সেটি যেন ভালোভাবেই বাঁচি। মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।'

ফারিবা জানান, ২০০০ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে গার্ল গাইডসে 'হলদে পাখি' থাকাকালে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করেন।

ফারিবার জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। তার স্কুল ও কলেজ পর্যায় কেটেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফারিবাই প্রথম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হারুন-উর-রশিদ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ পেয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষ ৬ জনের একজন তিনি। এখানে তিনি পিএইচডি করার প্রস্তাবও পান। তবে ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে তিনি স্নাতকোত্তর শেষ করেই দেশে ফেরত আসেন।

মাহনাজ হোসেন ফারিবা ৩৫ তম বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে কর্মরত আছেন।

ফারিবা বলেন, 'নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এ বছর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী নারী সদস্যদের মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়।'

মাহনাজ হোসেন ফারিবা। ছবি: সংগৃহীত

ফারিবার ভাষ্য অনুসারে, মনোনয়ন পাওয়ার পরবর্তী ধাপগুলো ছিল অনেক কঠিন। সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসতে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৬টি সদস্য রাষ্ট্রের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে।

বিশ্ব গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটস সংস্থার আন্তর্জাতিক মনোনয়ন কমিটি বিভিন্ন ধাপে যাচাই- বাছাইয়ের পর চলতি বছরের মে মাসে ৯টি দেশের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, মালয়েশিয়া, হংকং, তাইওয়ানের প্রার্থীদের সঙ্গে চূড়ান্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফারিবা জয়ী হন। এই নির্বাচনে ৬ জন বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ২ জন অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী প্রার্থী জয়লাভ করেন।

নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাড়াও জয় পেয়েছেন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ ও হংকংয়ের প্রার্থী। এই ৬ জনের নির্বাহী কমিটি আগামী ৩ বছর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ২৬টি দেশের গার্ল গাইডিং কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

ফারিবা বলেন, 'আমাকে এই সাফল্যের জন্য সব সময় লেগে থাকতে হয়েছে। ২৬টি দেশের সদস্য সংস্থার প্রধানদের ভোটারদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে হয়েছে। অনেক দেশের ডেলিগেটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।'

কেবল নমিনেশন পেলেই নির্বাচনে জয় পাওয়া যায় না মন্তব্য করে ফারিবা আরও বলেন, 'এ ব্যাপারে আমার প্রস্তুতি প্রায় ২ বছরের। নিজের যোগ্যতা আর কৌশল এই নির্বাচনে জয়লাভের ক্ষেত্রে আমাকে এগিয়ে রেখেছিল।'

ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেশের পাশাপাশি বিশ্বের ভিন্ন দেশের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের জন্য কাজ করা ইচ্ছে পোষণ করেন ফারিবা। বলেন, 'আমি এখন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী কমিটির সদস্য। আমার স্বপ্ন আমি বিশ্ব গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটস সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের পর্যায়ে যাবো। সারাবিশ্বের মেয়েদের জন্য কাজ করব। সেই পর্যায়ে যাওয়াটা অনেক বেশি কঠিন হবে। তবে আমি আমার চেষ্টা অব্যাহত রাখব।'

ফারিবার প্রেরণার জায়গা ছিলেন তার মা। তার মা-ও দীর্ঘদিন গার্ল গাইডসের সঙ্গে কাজ করেছেন।

ফারিবা চাকরি পাশাপাশি গবেষণা ও লেখালেখির কাজ করেন। তার বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র ও বই প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্ব গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটস সংস্থাটি সারা বিশ্বের মেয়েদের অধিকার ও আত্মউন্নয়নে কাজ করার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। এর আগে প্রায় ২০ বছর আগে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ পেয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

8h ago