সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা: টিআইবি

ছবি: টিআইবি

দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ছাড়া শীর্ষ তিনে থাকা অপর দুটি সংস্থা হলো পাসপোর্ট ও বিআরটিএ। এই ৩টি খাতে সবচেয়ে বেশি ঘুষও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় খানা জরিপ ২০২১ অনুসারে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির গবেষক ফারহানা রহমান সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন। সেবা খাতের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ৯টি খানা জরিপ পরিচালনা করেছে সংস্থাটি।

ছবি: টিআইবি

টিআইবি জানিয়েছে, ২০২১ সালের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭০. ৯ শতাংশ 'খানা' বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাত বা প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনো খাতে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ৭৪.৪ শতাংশ সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে; এর পরেই রয়েছে পাসপোর্ট ৭০.৫ শতাংশ, বিআরটিএ ৬৮.৩ শতাংশ, বিচারিক সেবা ৫৬.৮ শতাংশ, সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ৪৮.৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ৪৬.৬ শতাংশ এবং ভূমি সেবা ৪৬.৩ শতাংশ।

ছবি: টিআইবি

একই বাসস্থানে বসবাস করে, একই রান্নায় খাওয়া-দাওয়া করে এবং তাদের মধ্যে একজন খানাপ্রধান হিসেবে স্বীকৃত এমন পরিবারকে টিআইবি 'খানা' হিসেবে চিহ্নি করেছে। 

টিআইবি আরও জানিয়েছে, সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার খানার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৬৬.৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭০.৮ শতাংশ। তবে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষের শিকার খানার হার হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ সেটা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ১ শতাংশ।

ছবি: টিআইবি

এ ছাড়া ঘুষ আদায়ের শিকার খানার কমেছে। ২০১৭ সালে যেখানে ৮৯ শতাংশ খানা ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে 'ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না' উল্লেখ করেছিলেন, ২০২১ সালে সেখানে ৭২ দশমিক ১ শতাংশ সেটা উল্লেখ করেছেন।

তবে, ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ খানা ঘুষ দেওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হিসেবে 'হয়রানি বা ঝামেলা এড়ানোর জন্য' উল্লেখ করেছেন। যা ২০১৭ সালের ৪৭.১ শতাংশের তুলনায় বেশি। টিআইবি একে ঘুষ আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ধারার উদ্বেগজনক নির্দেশক হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিমা, ব্যাংকিং এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে; অন্যদিকে শিক্ষা, বিদ্যুৎ, কৃষি ও গ্যাস খাতে দুর্নীতি কমেছে।

ছবি: টিআইবি

২০২০-এর ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১ এর নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদের তথ্যভিত্তিক এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোতে সেবা পর্যায়ে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হওয়া অর্থের প্রাক্কলিত মোট পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ দশমিক ১ কোটি টাকা। যা ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

ছবি: টিআইবি

জরিপের বিষয়ে টিআইবি জানিয়েছে, সেবাখাতে দুর্নীতির ধরন ও মাত্রা নির্ণয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে দুর্নীতি বিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ পরিচালনা করছে টিআইবি। এ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বছর অন্তর ৯টি খানা জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এ খানা জরিপটি এ ধরনের নবম জরিপ। ২০২০-এর ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১-এর নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের খানাগুলো বিভিন্ন খাত থেকে সেবা নিতে গিয়ে যে দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে এই জরিপের মাধ্যমে। 

ছবি: টিআইবি

জরিপের আওতা হিসেব টিআইবি জানিয়েছে, এ জরিপে ব্যবহৃত দুর্নীতির সংজ্ঞা হচ্ছে 'সেবাখাতে ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার'। জরিপে ঘুষ নেওয়া বা ঘুষ দিতে বাধ্য করা ছাড়াও সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, দায়িত্বে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি ও প্রভাব বিস্তার এবং সময়ক্ষেপণসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানিকে দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরিপে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিপে অন্তর্ভুক্ত খানার ক্ষুদ্র দুর্নীতির অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয়েছে; খানার সদস্যদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

টিআবি আরও জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত সময়ে ৬৪টি জেলায় জরিপটি পরিচালিত হয়। নির্বাচিত খানাগুলো ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবাখাতে সেবা গ্রহণের সময় যেসব দুর্নীতি ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে তার ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

14h ago