অনুমতি ছাড়া বিদেশে, চাকরিতে ফেরার চেষ্টায় বরখাস্ত রেলের টিটিই

গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) ছাড়া বিদেশ গিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) বাণিজ্যিক বিভাগের সিনিয়র ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফের চাকরিতে ফিরতে চেষ্টা শুরু করেছেন।
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) ছাড়া বিদেশ গিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) বাণিজ্যিক বিভাগের সিনিয়র ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফের চাকরিতে ফিরতে চেষ্টা শুরু করেছেন।

চাকরিতে যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে তিনি বিভাগীয় বাণিজ্যিক বিভাগে যোগদানপত্র জমা দিয়েছেন। পত্রটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য (পূর্বাঞ্চল) বাণিজ্যিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় গত ৪ জুলাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন গত ৭ জুন থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।

তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাগজে-কলমে ১৬ জুন থেকে তিনি বিনা অনুমতিতে উপস্থিত ছিলেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুন তাকে চিঠি পাঠায় রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ। কিন্তু তিনি চিঠি উত্তর না দেওয়া এবং কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জানা গেছে, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী জিও ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেশত্যাগের সুযোগ নেই। কিন্তু জিও কিংবা বিভাগ থেকে ছুটি এমনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাননি শাহাদাত।

এদিকে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের তথ্য বলছে, গত ১৫ জুন সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেছিলেন শাহাদাত।

রেলওয়ের বিভাগীয় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর স্বাক্ষরিত বরখাস্ত আদেশে বলা হয়েছে, জিও ছাড়া বিদেশ যাওয়ার অপরাধে টিটিই মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে নথি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী হলেও তথ্য গোপন করে পাসপোর্টে প্রাইভেট সার্ভিস উল্লেখ করেছেন শাহাদাত।

তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ এবং অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগের অপরাধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী গুরুদণ্ড হিসাবে চাকরিচ্যুতির কথা বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের আইন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করা বিধিসম্মত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়া মানে ওই কর্মচারী সরকারকে ধোঁকা দিয়েছে। এসবের জন্য তার শাস্তি পেতে হবে।

জানা গেছে, শাহাদাত রেলওয়ে শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জুনিয়র টিটিই দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার নির্যাতনে জুনিয়র টিটিই ও টিসিরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাকে নিয়মিত ঘুষ না দিলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ মিলে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, বিদেশ যেতে হলে জিও নিতে হয় সেটি তিনি জানতেন না। এজন্য অনুমতি ছাড়া বিদেশ গিয়েছেন।

'আমি ছুটি নিয়েছি। তবে জিও গ্রহণ করিনি। এটা আমার ভুল ছিল,' তিনি বলেন।

তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সেটি এড়িয়ে যান।

অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

২০০৯ সালের ১২ জুলাই রেলে টিসি (টিকিট কালেক্টর) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শাহাদাত হোসেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর টিসি থেকে জুনিয়র টিটি হিসেবে পদোন্নতি পান।

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালের পাশে তার নামে একটি বাসা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে তিনি থাকেন না। সরকারি বাসার পাশাপাশি খালি জায়গায় ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।

কাজে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় গত ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা। পরে তার বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) অতিরিক্ত প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) তৌষিয়া আহমেদ বলেন, শাহাদাতের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago