বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে চা-শ্রমিকদের থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ

ফুলতলা চা বাগানের আওতাধীন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দিরের সামনে রাখা পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ফুলতলা চা বাগানের আওতাধীন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের শ্রমিকদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার আব্দুল মালেক, দুলু মণ্ডল এবং স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তারা প্রায় ৮ মাস আগে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি দেখিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ চা-শ্রমিকের পরিবার প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা করে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী চা-শ্রমিকেরা অগ্রিম কিছু টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদার কোনো কাজ করেননি। এ ঘটনায় চা-শ্রমিকেরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, এলাকাটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন। এখানে টেন্ডারই হয়নি। ৩৬টি খুঁটি ঠিকাদার কীভাবে নিলেন তা তদন্ত করে দেখা হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ, পিডিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের দিকে ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করেছিল মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ওই বাগানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতায় গ্রাহক থাকায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জিয়াউর রহমান ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অনাপত্তিপত্র (এনওসি) চেয়ে আবেদন করেন। এই বছরের ৩০ অক্টোবর পিডিবি অনাপত্তিপত্র প্রদান না করার কারণ জানিয়ে পল্লী বিদ্যুৎকে চিঠি দেয়। এরপর পিডিবির অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

তবে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের দিকে পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার আব্দুল মালেক, দুলু মণ্ডল এবং স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ চা-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, বাগানে কাজের জন্য তারা টেন্ডার পেয়েছেন। ঘর প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা করে দিতে হবে। এরপর চা-শ্রমিক নেতারা তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। ঠিকাদারকে অগ্রিম কিছু টাকাও দেন। পরে ঠিকাদার বাগানের মন্দির এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের ৩৬টি খুঁটি এনে রাখেন।

সরেজমিনে এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সেখানে উপস্থিত বাগানের হাসপাতালের কর্মচারী (ড্রেসারম্যান) সমীরণ দাস বলেন, পিডিবির বিদ্যুতে সুবিধা না থাকায় আমরা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিতে চেয়েছিলাম। ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান বলেছে টেন্ডার হয়েছে। ৩৫০ পরিবারের জন্য ঘর প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। চা-শ্রমিকরা গরিব মানুষ। সবাই মিলে কষ্ট করে আমারা শাহাজানের মাধ্যমে দুলু মণ্ডলকে প্রথম কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে। কাজ শুরু করলে বাকি টাকা কিস্তি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু ৭-৮ মাসে কাজ হয়নি।

এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের সর্দার সজল বুনার্জি বলেন, ঠিকাদার আব্দুল মালেক, দুলু মণ্ডলের সঙ্গে আমরা শ্রীমঙ্গলের একটি চায়ের দোকানে বসে কথা বলি। তারা বলেছে টেন্ডার পেয়েছে। তারা ঘরে মিটার পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এর জন্য টাকা চাওয়া হয়। এতে আমরা রাজি হই। এরপর শাহাজানের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কাজ হচ্ছে না। এটা নিয়ে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। শনিবার শাহাজান যোগাযোগ করে বলেছে টাকা দিয়ে দেবে। কাজ করবে না।

টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান বলেন, ঠিকাদার মালেকের সুপারভাইজার দুলু মণ্ডল বলেছেন তারা টেন্ডার পেয়েছেন। এরপর ঘর প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা করে নেওয়ার চুক্তি হয়। প্রথম কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছি। ৪৭ হাজার টাকা নিয়েছেন দুলু মণ্ডল। কাজ না হওয়ায় খুব ঝামেলায় আছি।

শাহাজানের দাবি, মিটার, রড এবং বোর্ডের জন্য এই টাকা নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার আব্দুল মালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে যোগাযোগ করা হলে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ঠিকাদার আব্দুল মালেকের সুপারভাইজার দুলু মণ্ডল।

পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ কুলাউড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. উসমান গনি বলেন, ফুলতলা চা বাগান এলাকায় পিডিবির উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইন রয়েছে। গ্রাহক আছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এনওসি চেয়েছিল। গ্রাহক থাকায় এনওসি দেওয়া হয়নি।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফুলতলা চা বাগান এলাকায় পিডিবির লাইন থাকায় পল্লী বিদ্যুতের টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আছে একই স্থাপনায় দুটি সংস্থার লাইন থাকতে পারে না। প্রতারক চক্র চা-শ্রমিকদের থেকে টাকা নিয়েছে। ওই এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো কারা নিয়ে গেল তা তদন্ত করা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

US officials preparing for possible strike on Iran in coming days, Bloomberg reports

Iran and Israel continue to attack each other on Wednesday night, as Donald Trump weighs US involvement

8h ago