বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন সেই বেলায়েত শেখ

৫৫ বছর বয়সে দেশের প্রধান ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোচনায় আসা গাজীপুরের বেলায়েত শেখ বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
বেলায়েত শেখ। ছবি: সংগৃহীত

৫৫ বছর বয়সে দেশের প্রধান ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোচনায় আসা গাজীপুরের বেলায়েত শেখ বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

আজ সোমবার রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জার্নালিজম বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। ৬০ নম্বরের এ পরীক্ষায় বেলায়েত ৩২ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভাগের কো-অর্ডিনেটর শাতিল সিরাজ।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা আছে।

আজ দুপুরে বেলায়েত তার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার এই খবর জানান।

এ ব্যাপারে বেলায়েত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরীক্ষায় ফেল গেলে (করলে) কত কষ্ট লাগে, তা যে ফেল করে সেই জানে। শেষ পর্যন্ত আমি পাস করেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।'

বেলায়েত ১৯৮৩ সালে প্রথমবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও টাকার অভাবে সেবার নিবন্ধন করতে পারেননি।

১৯৮৮ সালে তিনি আবারও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে বছর সারাদেশে বন্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি।

এর কয়েক মাস পর তিনি একজন আলোকচিত্রী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি 'দৈনিক করতোয়া' পত্রিকার গাজীপুর জেলার শ্রীপুর প্রতিনিধি।

কর্মজীবন শুরু করার পর বেলায়েত আর পড়ালেখা না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ছোট ভাইদের মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক।

তার মেয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও কলেজে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি, তার বড় ছেলেও পড়ালেখা করতে আগ্রহী নন।

ছেলে-মেয়েরা তার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন বেলায়েত।

কিন্তু অদম্য বেলায়েত অবশেষে ২০১৯ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যে বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দেন, একই বছর তার ছোট ছেলেও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

আশপাশের মানুষের উপহাস আর বিদ্রুপ উপেক্ষা করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বেলায়েতের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার। সে অনুসারে চলতি বছরের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু সুযোগ পাননি।

পরে একে একে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন তিনি।

বেলায়েত বলেন, 'সাংবাদিকতা বিভাগ আছে কেবল এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। চান্স না পেয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এ অবস্থায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আমাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পরামর্শ দেয়। সে অনুসারে আমি এখানে পরীক্ষায় অংশ নেই।'

শ্রীপুর থেকে রাজশাহী গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কতটা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমারে এখন আটকায় রাখার মতো কিছু নাই। দৈনিক করতোয়া কর্তৃপক্ষ যদি রাজশাহীতে আমাকে একটা কাজের সুযোগ করে দেয় তাহলে খুব ভালো হয়। না হলে মায়ের অনুমতি নিয়ে যেভাবে হোক আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাব।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

2h ago