সেই প্রতিবেশীরাই এখন কৃষ্ণার প্রশংসায় পঞ্চমুখ

মেয়ে ফুটবল খেলে। গ্রামাঞ্চলে এ যেন রীতিমতো অস্বাভাবিক ব্যাপার, প্রতিবেশীরা তাই কান ভারি করেছিলেন নমিতা রানী সরকারের। নমিতাও মেজাজ হারিয়ে মেয়ের ফুটবল পাংচার করে অর্ধেক কেটে ফেলেছিলেন। মায়ের এমন আচরণে সেদিন যে মেয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিল, সেই কৃষ্ণা রানী সরকারের সাফল্যে আনন্দে উদ্বেল টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের সেই প্রতিবেশীরা।
পাথালিয়া গ্রামে বাড়ির সামনে কৃষ্ণা রানী সরকার। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

মেয়ে ফুটবল খেলে। গ্রামাঞ্চলে এ যেন রীতিমতো অস্বাভাবিক ব্যাপার, প্রতিবেশীরা তাই কান ভারি করেছিলেন নমিতা রানী সরকারের। নমিতাও মেজাজ হারিয়ে মেয়ের ফুটবল পাংচার করে অর্ধেক কেটে ফেলেছিলেন। মায়ের এমন আচরণে সেদিন যে মেয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিল, সেই কৃষ্ণা রানী সরকারের সাফল্যে আনন্দে উদ্বেল টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের সেই প্রতিবেশীরা।

সোমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তিন গোলের দুটিই এসেছে কৃষ্ণার পা থেকে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের এই নায়কের এই পর্যায়ে উঠে আসার পেছনেও আছে কষ্টের গল্প।

মাঠে কৃষ্ণা রানী সরকার। ছবি: কৃষ্ণার ফেসবুক থেকে নেওয়া

কৃষ্ণার ফুটবল কেটে ফেলা প্রসঙ্গে তার মা নমিতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আর কি করতে পারতাম? প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নিয়মিত তির্যক বাক্য শুনে শুনে এবং আমার মেয়ে এবং আমার পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।'

মাত্র চার বছর বয়সী কৃষ্ণা তার বাড়ির পাশের একটি মাঠে ফুটবল খেলা শুরু করেন। বেড়ে উঠার পরও চালিয়ে যান ফুটবল। ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতেন বলে প্রতিবেশীদের বাঁকা চাহনি আর তির্যক মন্তব্যের তোড় ছুটে আসে। তবে পড়াশোনায় খামতি ছিল না। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভালো ফল হচ্ছিল। তাতেও প্রতিবেশীদের টিপ্পনী কমছিল না।

সেই সময়টা এখন অনেক দূরের ঘটনা বলতে হয়। কারণ বিপুল সাফল্য বদলে দিয়েছে মানুষের চিন্তা। প্রতিবেশীরা এখন কৃষ্ণার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এখন সারা দেশ থেকে মানুষ কৃষ্ণকে দেখতে আসে বলে তারাও কৃষ্ণাকে নিয়ে গর্ব করেন।

সাফ জেতার পর তার এলাকায় গেলে প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষ্ণার সাফল্যের আগে বলতে গেলে এই গ্রামে বাইরের কেউ আসত না, 'আমরা কৃষ্ণার সাফল্যে আনন্দে উদ্বেলিত। সে আমাদের অন্যদের সামনে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করতে সক্ষম করেছে।'

ট্রফি হাতে কৃষ্ণা রানী সরকার। ছবি: কৃষ্ণার ফেসবুক থেকে নেওয়া

যে এলাকাবাসীর কথায় মেয়ের ফুটবল কেটে ফেলেছিলেন নমিতা, সেই প্রতিবেশীদের আচরণ বদলে যাওয়ায় গর্বিত নমিতাও, 'এখন পরিস্থিতি বদলেছে এবং সেই প্রতিবেশী এবং গ্রামবাসীরাই এখন আমার বাড়িতে আসছে এবং আমার মেয়ের সাফল্যে তাদের আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করছে।'

চারপাশের প্রতিবন্ধকতার ভিড়েও কেউ কেউ থাকেন আলো হাতে পথ দেখাতে। কৃষ্ণাকে সেই পথটি দেখিয়েছিলেন তার মামা গৌর চন্দ্র সরকার।

মামার এই সমর্থন যে কত প্রয়োজন সেটা বিশেষ করে উপলব্ধি করেন কৃষ্ণা, 'মেয়েরা এখন ফুটবল খেলছে এবং এখন ভালো করছে। কিন্তু যে মেয়েরা খেলতে চায় তাদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সমর্থন প্রয়োজন।'

কৃষ্ণা মনে করেন তার বিকাশে বাবা বাসুদেব সরকার, মামা গৌর চন্দ্র সরকার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইম-আল-মামুন এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম রায়হান বাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, 'উনাদের মধ্যে বাপন স্যার আমাকে শুধু অনুপ্রেরণাই দেননি; তিনিই আমাকে একজন ফুটবলার বানিয়েছেন।'

২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে মধ্য দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন কৃষ্ণা। পরে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৬, ১৮ ও ১৯ দলে। এখন খেলছেন জাতীয় দলে।

কৃষ্ণার অধিনায়কত্বে এর আগে ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের গ্রুপ 'সি' চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার ইরান, চাইনিজ তাইপেই, কিরগিজস্তান, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আট গোল করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কৃষ্ণা।

Comments

The Daily Star  | English

Onions sting

Prices of onion increased by Tk 100 or more per kg overnight as traders began stockpiling following the news that India had extended a virtual restriction on its export.

11h ago