রাজেন্দ্র কলেজ: জমি নিয়ে বিরোধে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ
ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে শহর শাখার সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
আজ শনিবার সকালে জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে কাজ করতে পারেনি নির্মাণ শ্রমিকরা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে রাজেন্দ্র কলেজের এই সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে এ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। সীমানা প্রাচীরের সাথে একটি বড় ফটক ও দুই পাশে দুটি ছোট ফটক করার কথা রয়েছে বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শনিবার সকাল ১০টার দিক থেকে ওই কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখার সামনে ফরিদ শাহ সড়ক সংলগ্ন একটি সীমানা প্রাচীর আগে ছিল। ওই জায়গাতেই নতুন আরেকটি সীমানা প্রাচীর অনুমোদন হয়ে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। সে প্রাচীরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে। আজ শনিবার শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে জানান, ওই জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে এজন্য কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, যে জায়গায় আগে থেকে সীমানা প্রাচীর ছিল এবং যার পাশে ফরিদপুর পৌরসভার সড়ক সে জায়গা নিয়ে প্রশাসনের সাথে কী বিরোধ থাকতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। এতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আমাদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তির মধ্যে।
এ কাজের ঠিকাদার মোহাম্মদ মিঠু জানান, ৯ জন শ্রমিক এ কাজটি করছিলেন। বর্তমানে গর্ত খোড়ার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২৭টি গর্ত খোড়া হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা কাজা শুরু করে। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা বলেন, কাজ শুরু করেছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজ বন্ধ করেছে তারাই। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ করতে হচ্ছে বলে জানান।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কী সমস্যা তা আমাদের বোধগম্য নয়।
'মাঠের মালিক কলেজ, খাজনা দেয় কলেজ সে কাজ কেন বন্ধ করবে প্রশাসন?'-প্রশ্ন রেখে অধ্যক্ষ বলেন, আমি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছি। এ ঘটনায় কলেজের শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আমি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করেছি।
প্রশাসন কেন বাধা দিচ্ছে জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিপুল কুমার দাস গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন মাঠটি জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি ছিল। আরএস ও এসএ অনুযায়ী ওটি জেলা প্রশাসনের। কিন্তু বিএস রেকর্ডে এটি শিক্ষা বিভাগের নামে রেকর্ড হয়। এ রেকর্ড সংশোধনের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার প্রথম জজ আদালতে ২৮/২০২১ মামলা চলমান। ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর করা দৃষ্টিকটু বিধায় সেটি করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ওই মাঠ এবং মাঠ সংলগ্ন ভবনগুলি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের কাছে দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভূমিমন্ত্রণালয় ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিপুল কুমার দাস বলেন, রাষ্ট্রপতির সে আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ সংলগ্ন ওই মাঠে আগেও সীমানা প্রাচীর ছিল জানানো হলে তিনি বলেন, ওই জায়গায় আগে সীমানা প্রাচীর ছিল সেটি আমার জানা নেই।
Comments