জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরি ভাড়া ৩-১০ গুণ বেশি আদায়ের অভিযোগ

রাজবাড়ীর জৌকুরা ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: স্টার

রাজবাড়ীর জৌকুরা ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

রাজবাড়ী সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম নৌপথ জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নে জৌকুরা ফেরিঘাট অবস্থিত। বর্তমানে এই নৌপথে মোট ৩টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি চলাচল করে।

এই নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ৩ বছর মেয়াদে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ নৌপথে প্রতিটি ট্রলার পারাপারের টেইলর ট্রাকের (কন্টেইনার বহনকারী ট্রাক) ভাড়া ৬২৫ টাকা, ভারী ট্রাক ৫০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২৫০ টাকা, ছোট ট্রাক ১৯০ টাকা, বড় বাস ২২৫ টাকা, মিনিবাস ১২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ১০০ টাকা, ফোর হুইলার যানবাহন ১০০ টাকা, সেডান কার ৬৫ টাকা, ৩-৪ চাকার মোটরাইজড যান ২৫ টাকা এবং মোটরসাইকেল ১৫ টাকা।

তবে যানবাহন চালক ও ঘাট সূত্রে জানা যায়, ভারী ট্রাকের ভাড়া মালামাল ছাড়াই নেওয়া হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং মালামাল থাকলে নেওয়া হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের ভাড়া নেওয়া হয় ১ হাজার টাকা, মিনি ট্রাকের ভাড়া নেওয়া হয় ৮০০ টাকা, বড় বাসের ১ হাজার ২০০ টাকা, মিনিবাস ৮০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৭০০ টাকা, মোটরসাইকেলের ভাড়া ১৫০ টাকা নেওয়া হয়।

ট্রাকে বালু, পাথর, কয়লা পরিবহনে ফেরি পারাপারের জন্য দিতে হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে জৌকুরা ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরির অপেক্ষায় ২টি বাস, ৩টি ট্রাক ও ১টি মাইক্রোবাস পাওয়া দাঁড়িয়ে আছে। তবে অনেক যাত্রীকে ট্রলারে নদী পার হতে দেখা যায়।

এই নৌপথ ব্যবহার করলে চালক এবং যাত্রীদের অন্তত ১২০ কিলোমিটার কমে যায়। এই নৌপথে জৌকুরা ঘাট থেকে সকাল ৮টায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় সর্বশেষ ফেরি ছেড়ে যায়। অপরদিকে নাজিরগঞ্জ ঘাট থেকে বেলা ১১টায় প্রথম ফেরি ছাড়ে। আর বিকেল ৬টায় ছেড়ে আসে সর্বশেষ ট্রিপ।

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে রাজবাড়ীতে পাথর বোঝাই করে যাওয়া ট্রাকচালক উজ্জল বাড়ৈ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এই নৌপথে প্রথম এলেন। তিনি জানতেন ট্রাক পার হতে ১ হাজার ৩০০ টাকা লাগবে। কিন্তু নদী পার হওয়ার পর তাকে ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা স্লিপ দেওয়া হয় এবং তাকে ওই টাকাই দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এই ঘাট দিয়ে গেলে ১৫০ কিলোমিটার পথ কম হয়। কিন্তু এত বেশি ভাড়া নেবে জানলে আসতাম না।'

মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাটে পারের অপেক্ষায় ছিলেন আবির হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোটরসাইকেল পারাপারের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কত তা জানি না। কয়েক মাস আগেও ১০০ টাকা নেওয়া হতো। তেলের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। কার কাছে অভিযোগ করব।'

ফরিদপুর থেকে পাবনাগামী নবীনবরণ বাসের চালক জানান, তিনি প্রতিদিন এই নৌপথ ব্যবহার করে যাওয়া-আসা করেন। তাকে নদী পার হবার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। সরকার নির্ধারিত ভাড়া কত, তা তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে কথা বরতে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে এই ঘাটের ইজারাদার সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শরীফের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মিটিং এ আছেন বলে কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জোকুরা ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সোহেল রানা ডেইলি স্টারকে জানান, যানবাহন পারাপারের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনেক আগের। কিন্তু এর মধ্যে তেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এ কারণে ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হয়।

বালু, পাথর ও কয়লা বোঝায় ট্রাক হলে ভাড়া বেশি নেওয়া হয় স্বীকার করে তিনি বলেন, 'ভারী গাড়ির জন্য আমাদের একটি গাড়ি কম আনতে হয়। তাই বেশি ভাড়া নেই।'

জানতে চাইলে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুক্তির চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে এই বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পরেছি। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেছি। চুক্তির চেয়ে ভাড়া বেশি নেওয়া হলে নিয়ম অনুযায়ী সতর্ক করা হবে।'

'সতর্ক করার পরেও একই কাজ পুনরাবৃত্তি হলে এবং তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিল করার বিধান আছে। তবে প্রক্রিয়াটি বেশ লম্বা,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago