৩০-৪০ হাজার টাকার ঋণের মামলায় ১২ কৃষক কারাগারে

পাবনা
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

পাবনার ঈশ্বরদীতে ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগে মামলায় ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার তাদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এই কৃষকরা সবাই ভারইমারি উত্তরপারা সবজি চাষি সমবায় সমিতির সদস্য। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ঋণ নিয়েছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী মো. আব্দুল মাজেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৬ সালে সমিতির নামে ৩৭ জন কৃষক প্রত্যেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি পরিশোধ না করায় সুদ আসলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

গ্রেপ্তার হওয়া কৃষকেরা হলেন ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের আলম প্রামাণিক (৫০), মাহাতাব মণ্ডল (৪৫), আবদুল গণি মণ্ডল (৫০), শামীম হোসেন (৪৫), সামাদ প্রামাণিক (৪৩), নূর বক্স (৪৫), মোহাম্মদ আকরাম (৪৬), মোহাম্মদ রজব আলী (৪০), কিতাব আলী (৫০), হান্নান মিয়া (৪৩), মোহাম্মদ মজনু (৪০) ও মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০)।

গ্রেপ্তার হওয়ার একাধিক কৃষকের পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, ৫ বছর আগেই তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। এর পরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হওয়ার কথাও তারা জানতেন না। প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবীর দাবি, খেলাপি ঋণ আদায়ে নিয়ম মেনে ২০২১ সালে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৫ নভেম্বর ৩৭ জন কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জেলে পাঠানো কৃষক আতিয়ার রহমানের মেয়ে তারিফা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৬ সালে তার বাবা ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে সুদাসলে ৪৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

রজব আলীর স্ত্রী বুলিয়া বেগম দাবি করেন ২০১৬ সালে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিলেও ২০১৭ সালে ৩৩ হাজার ৭৬৭ টাকা পরিশোধ করেন তার স্বামী। টাকা পরিশধের রশিদ রয়েছে দাবি করে তিনি সমবায় ব্যংকের একটি রশিদ দেখান।

টাকা পরিশধের পরও তার স্বামী কেন গ্রেপ্তার হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, ব্যংকের আইনজীবী আব্দুল মজিদ জানান, নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ না করায় ৩৭ জন কৃষকের কাছে সুদাসলে প্রায় ১২ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদেরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তারা সেটা আমলে নেয়নি।

কৃষকদের কারাগারে পাঠানোয় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে জানিয়ে ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঋণের কিস্তি নিয়ে কোনো সমস্য হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা সমাধান করা যেত। গ্রেপ্তার হওয়া গনি মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরা দাবি করছে গনি মণ্ডলের ছেলে মাহাতাব ঋণ নিলেও বাবা ও ছেলে দুই জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, সুনির্দিষ্ট পরোয়ানা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক কাজই জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, নিয়ম মেনেই ব্যংক ঋণ প্রদান করে এবং খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে আইনের দ্বারস্ত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Jewellers cut gold prices by Tk 3,452 a bhori

From tomorrow, each bhori of 22-carat gold will cost Tk 138,708

47m ago