চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে

চট্টগ্রাম বন্দরে ধর্মঘটে অলস বসে থাকা লাইটার জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

ন্যুনতম মজুরি ২০ হাজার টাকার নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে আজ রোববার ভোররাত থেকে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ সাগরে রেখে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। এরপর এসব লাইটার জাহাজে করে দেশের নানা ঘাটে নিয়ে পণ্য খালাস করা হয়।

চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের মতো দেশের অন্য এলাকাগুলোতেও লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ লাইটার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. নবী আলম।

গত ১৫ নভেম্বর ঢাকায় ন্যুনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।

শ্রমিকদের অন্য দাবিগুলো হলো- নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল এবং নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।

নবী আলম জানান, মধ্যরাতের পর থেকে বন্দরের বহির্নোঙরে রাখা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ করে দেন সাধারণ শ্রমিকরা। একইসঙ্গে বন্দরনগরীর মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৮টি বেসরকারি ঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজও বন্ধ করে দেন তারা।

৮টি শ্রমিক সংগঠনের  প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ নৌযান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনও এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।

ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৫ বছরের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৭ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। গত বছরের জুন মাসে মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলে তা হয়নি।

এরপর থেকে ফেডারেশনের নেতারা বেতন বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার ও নৌযান মালিকরা তাতে কান দেননি বলে জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, 'মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে একবার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিল। তখন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন তার অনুরোধে আমরা এই পরিকল্পনা স্থগিত করি।'

শাহ আলম জানান, শ্রম অধিদপ্তর গত ২১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। পরে ১৩ অক্টোবর মালিকদের সঙ্গে বসে। শেষ বৈঠকে নতুন মজুরি নির্ধারণের জন্য ২০ অক্টোবরের মধ্যে সব অংশীজনদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কিছুই হয়নি বলে মন্তব্য করেন শাহ আলম।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

8h ago