নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে সারাদেশে যাত্রীদুর্ভোগ

১০ দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু
শনিবার রাত ১২টার পরে বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় সব ধরনের নৌযান নোঙর করে রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকাসহ ১০ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।

শনিবার রাত ১২টার পর থেকেই ধর্মঘট শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি হলো- নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের লান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌবন্দরে আটকা কার্গো, পণ্য খালাস বন্ধ

আজ রোববার সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আটকা পড়েছে অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ। কর্মবিরতির কারণে পণ্যবাহী জাহাজ থেকে বন্ধ রয়েছে পণ্য খালাস। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে নদী বন্দরের কার্যক্রম।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ বাহার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত কারণে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাদের কর্মবিরতি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

বরিশালে বিপাকে যাত্রীরা

শনিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছে নৌযান শ্রমিকরা। বরিশাল নদী বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ থাকায় বিপাকে পরেছেন নৌ-যাত্রীরা।

রোববার সকালে যাত্রীরা ঘাটে এসে লঞ্চ চলাচল বন্ধ দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। পিরোজপুর থেকে রাজমিস্ত্রি মোহাম্মদ খোকন সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দরে এসে বসে থেকেও দুপুর বারোটা পর্যন্ত ভোলায় যেতে পারেননি।

তিনি জানান, নৌযান ধর্মঘট থাকায় তাকে ট্রলারে করে বেশি ভাড়ায় ভোলায় যেতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সারাদেশে তেলবাহী, বালুবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হোক। তবে এখন পর্যন্ত সরকারসহ কোনো পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

চাঁদপুরে যাত্রীদের জন্য বিআইডাব্লিউটিএর বিকল্প ব্যবস্থা

চাঁদপুরে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর ফলে রোববার ভোর থেকে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ কয়েকজন যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। তবে অনেকেই লঞ্চ না পেয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।

লঞ্চ শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, 'মালিকপক্ষ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের শ্রমিকদের চুক্তি ছিল ৫ বছর পর পর আমাদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু ২০২১ সালে তা নানা কারণে আর বৃদ্ধি পায়নি। ২০২২ সালও চলে যাচ্ছে কিন্তু মালিক পক্ষ ও শ্রম মন্ত্রণালয় আমাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ জন্য আমরা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি। আমাদের বেতনবৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।'

চাঁদপুর বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তা মো. মমিন উল্লাহ বলেন, 'আমি মনে করি লঞ্চ মালিক শ্রমিক ও বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বসে এর দ্রুত সমাধান করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

NCP serves show-cause notices on five leaders over Cox's Bazar trip on Aug 5

They were requested to appear in person and provide a written explanation within the next 24 hours

57m ago