চা-শ্রমিকদের ১৯ মাসের বর্ধিত মজুরির বকেয়া পরিশোধ হয়নি

চা-শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরির বকেয়া
মৌলভীবাজারের সাতগাঁও চা-বাগান। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

চা-শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা হয়েছে। ঘোষণার পর থেকে চা-শ্রমিকরা নতুন হারেই মজুরি পাচ্ছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী বর্ধিত মজুরির বকেয়া অংশ এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

এই বকেয়া পরিশোধ না করায় কোনো শ্রমিকের ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই পাওনা পরিশোধের দাবিতে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে। সেইসঙ্গে চা-শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সমাবেশ করছে।

চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত আগস্টে দেশের চা-বাগানগুলোয় শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১৯ দিন লাগাতার কর্মবিরতির পর ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা-বাগান মালিকদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চা-শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়। চা-শ্রমিকরা এই ঘোষণার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন।

প্রথা অনুযায়ী প্রতি ২ বছর পরপর চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নতুন চুক্তির পর মজুরির বর্ধিত বকেয়া অংশ পরিশোধ করা হয়। সর্বশেষ মজুরির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।

সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও মজুরি বিষয়ে কোনো সমাধান না আসায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। এতে চা-বাগানে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের ১৬৬ চা-বাগানে ১ লাখ ৩ হাজার স্থায়ী ও ৩৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক আছেন।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আগস্টের ঘোষণার পর থেকে চা-শ্রমিকরা বর্ধিত হারেই মজুরি পাচ্ছেন। কিন্তু, ১৯ মাসের বর্ধিত মজুরির বকেয়া অংশ তারা এখনো পাননি।

কার্যদিবস হিসেবে একেকজন শ্রমিকের পাওনা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আরও জানিয়েছেন, বকেয়া মজুরি আদায়ে তারা চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সমাধান না হওয়ায় গত ১৪ নভেম্বর চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চা-শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরির বকেয়া অংশ পরিশোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মালিকপক্ষ নানান অজুহাতে বর্ধিত ৫০ টাকা বিগত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন থেকে পরিশোধ করতে গড়িমসি করছে। অথচ ইতোপূর্বে যত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে এর প্রত্যেকটি চুক্তির বর্ধিত বকেয়া অংশ পূর্ববর্তী চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন থেকে কার্যকর হয়েছে।

চা-সংসদ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে একাধিকবার দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা বৈঠক করেও ঘোষিত মজুরি অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। ফলে চা-শ্রমিকদের মধ্যে বকেয়া মজুরি না পাওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বকেয়া মজুরি আদায়ে নানান জায়গায় যাচ্ছি। চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি। মালিকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বকেয়া মজুরির বিষয়ে কথা হয়নি। আমরা (চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ) পাওনা টাকার জন্য তাদের চাপ দিচ্ছি। বকেয়া পরিশোধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে যাবো।'

অন্যান্য সংগঠনও বর্ধিত বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবি জানাচ্ছে।

গত ৩ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি আগামী বিজয় দিবসের আগেই বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবি জানিয়েছে।

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ কাফি রতন, সমন্বয়ক এস এম শুভ ও আহ্বায়ক সবুজ তাঁতি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বিজয়ের এই মাসে চা-শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে বিজয় দিবস উদযাপন যথাযথ ও পরিপূর্ণ হবে না। তাই বিজয় দিবসের আগেই চা-শ্রমিকদের ২০২১-২০২২ সালের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে।

নেতারা বলেন, শীতকালে বাগানে চা-গাছের কলম করা শুরু হয়েছে। এই মৌসুমে চা-শ্রমিকদের আয় কমে যায়। মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে চা-শ্রমিকদের সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টকর। এক্ষেত্রে বর্ধিত মজুরির বকেয়া অংশ পেলে তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।

চা-শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি সম্পাদনের দাবিতে গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশন মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে চা-শ্রমিকদের প্রতিনিধি সভা করেছে। সভা থেকে দ্রুত চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশীয় চা-সংসদ সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বকেয়া মজুরি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানাবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party central office vandalised, library set on fire in Kakrail

Protesters linked to Gono Odhikar Parishad demand ban on JP, accuse it of siding with Awami League

2h ago