‘মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় নাগরিকদের লড়াই করতে হবে’

ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম. এ. মতিন বলেন, মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় নাগরিকদের লড়াই করতে হবে। জনগণ কোনো কিছু আদায় করতে চাইলে সেটা যে সম্ভব তা বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশ প্রমাণ করে। জনগণ নেমেছে বলেই সরকার আটকাতে পারেনি।

আজ সোমবার সকাল ১১টায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে 'বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার: কতটুকু? কার জন্য?' শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো আইন নয়। এটা কোনো ধরনের আইনের মধ্যেই পড়ে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে চ্যালেঞ্জ করে কেন আদালতে মামলা করা হচ্ছে না? সাংবিধানিক স্বাধীনতা যেগুলো আছে সেগুলোকে ব্যবহার করে লড়াই চালাতে হবে। অসাংবিধানিক আইনগুলো যথাযথভাবে চ্যালেঞ্জ করা উচিত।'

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসের গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. সাইমুম পারভেজ বলেন, '১১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত ৪৩৩ জনকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিএসএ) অধীনে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৩০০ মামলা দায়ের এবং প্রায় ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

সিজিএসের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে তিনি জানান, জানুয়ারি ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর মধ্যে ডিএসএ'তে ৮৯০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২ হাজার ২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সমাজের সব স্তরের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।'

তিনি তার প্রবন্ধে কিছু প্রবণতার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'প্রথম প্রবণতা হচ্ছে- বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। দ্বিতীয় প্রবণতা হচ্ছে- মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হরণ শুধু বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়- বরং ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী ইত্যাদি সমাজের সব পেশার মানুষকেই ভুক্তভোগী করে তুলেছে। তৃতীয় প্রবণতা হচ্ছে- ভুক্তভোগীদের অধিকাংশ মূলত ১৮-৪০ বছর বয়সী। এমনকি ১৮ বছরের কম বয়সীরাও অভিযুক্ত হচ্ছে। চতুর্থ প্রবণতা হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়েও রাজনৈতিক কর্মীরা বেশি এই আইনের মাধ্যমে দমনকারী হয়ে উঠেছে।'

ড. সাইমুম পারভেজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিডিয়ার মালিকানার বিষয়ে বলেন, 'বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রায় সবগুলো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানাই বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে। যাদের নানামুখী অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে।'

'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্রের ঘাটতির মধ্যে 'পজিটিভ কোরিলেশন' আছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের বিস্তার ঘটেছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। উভয়ক্ষেত্রেই সমাজের ম্যাক্রো থেকে মাইক্রো, উচ্চ থেকে নিম্ন সব স্তরেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হরণ লক্ষণীয়। সমাজের সব স্তরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের এই বিস্তার আগে দেখা যায়নি, গত এক দশকে (২০১৩-২০২২) এটি নতুন একটি প্রবণতা। একদিকে যেমন ব্যক্তি-পর্যায়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে, আরেকদিকে ব্যক্তি-পর্যায়ে নিপীড়ক তৈরি হয়েছে। নিপীড়িত ও নিপীড়ক উভয়ের সমাজে সব ক্ষেত্রে বিস্তার হয়েছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, '২০১৩ সালের আগেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিস্তৃত ও আগের চেয়ে সংখ্যা ও কাঠামোগত দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে সেলফ-সেন্সরশিপ তৈরি হচ্ছে। মতপ্রকাশের অধিকার দমনের পক্ষে সম্মতি আদায়ে প্রধানত দুটো পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। একদিকে গ্রেপ্তার, হয়রানি, হামলা, গুম ইত্যাদির মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ, সুপ্রিম লিডার, ধর্ম, উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্নাতীত বয়ান তৈরি করা; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি স্পর্শকাতর ইস্যুকে ব্যবহার করা এবং রাষ্ট্র, সরকার, ও ক্ষমতাসীনদের আলাদা না রেখে একত্রে বিবেচনা করা।'

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'মত প্রকাশের স্বাধীনতার হরণ কেবল এই আমলেই হচ্ছে, তা নয়। বরঞ্চ আগের আমলগুলোতেও হয়েছে।'

ইলিয়াস খান বলেন, 'বিদেশে যেসব সাংবাদিক সক্রিয় আছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Anatomy of BGB shootings in Rampura

It was 6:14pm on Friday, July 19, 2024. Two Border Guard Bangladesh (BGB) personnel were advancing into Banasree G Block in Dhaka.

17h ago