আগুনের পাশে বসে শীত নিবারণের চেষ্টা ঘর হারানো ম্রোদের

ঘর হারিয়ে রেংয়েনপাড়ার নিঃস্ব ম্রোরা আগুনের পাশে বসে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ছবি: স্টার

বান্দরবানের লামায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার ম্রো পরিবারগুলো আগুনের পাশে বসে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শিশুসহ অনেকের গরম কাপড়চোপড় না থাকায় প্রচণ্ড শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তারা। ঘর হারিয়ে নিঃস্ব এই পরিবারগুলোর আতঙ্ক এখনো কাটেনি।

গত ১ জানুয়ারি গভীর রাতে লামা উপজেলার রেংয়েনপাড়ায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পাড়ার লোকজনের অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড লোকজন নিয়ে এসে এই হামলা চালিয়েছে।

এর মধ্যে গতকাল রাতে পাড়ার মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়। পাড়াপ্রধান রেংয়েন ম্রো বলেন, রাত ৯টার দিকে পাড়ার পাশে ১০ থেকে ১২টি টর্চের আলো দেখা যায়। তিনি বলেন, হামলা ও লুটপাটের ঘটনার পর এমনিতে পাড়াবাসী আতঙ্কে আছেন। গতকাল রাতে বাসিন্দাদের মধ্যে আবার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুরুষেরা পালা করে সারা রাত পাহারা দিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে এখন তারা রাত কাটাচ্ছেন।

হামলার শিকার সিংচ্যং ম্রো কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, নতুন একটি ঘর তৈরি করেছিলাম আমরা। রাবার কোম্পানির লোকেরা আমাদের সেই ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের খাওয়া-পরার কিছুই নেই। তাঁতের সুতা কেনার জন্য ঘরে থাকা চার হাজার টাকাও লুট করে নিয়ে গেছে।

ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে কান্না থামেনি স্বামীহারা চামরুন ম্রোর। বাষ্পরুদ্ধ গলায় বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ, আমার একহাত নাড়াচাড়া করতে পারিনা। গত বছর জুম চাষও করতে পারিনি। ওরা আমার জুম পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমি একহাতে দিনমজুরি করে ২০০ টাকা পাই। এই টাকায় ঘরে দুটা বাচ্চার খাওয়া-পরা, আমার নিজের খরচ। এত কষ্ট করেও পাড়াবাসীর সাহায্যে ছোট একটা ঘর তুলেছিলাম। সেই ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি দৌড়াতে পারি না, আর একটু দেরী হলে পুড়েই মারা যেতাম।

এই কথা বলেই তার দুই বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করেন চামরুন ম্রো।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে লামা সরইয়ের ক্যাজু পাড়ার পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক মোহাম্মদ শামীমসহ তিন পুলিশ সদস্য রেঙয়েন পাড়া পরিদর্শন করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপক মো. কামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, রেংয়েনপাড়ার হামলার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। পাহাড়িরা এগুলো নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

2h ago