‘ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান থেকে নজরদারির প্রযুক্তি কিনেছে ঢাকা’

ইসরায়েলভিত্তিক সরবরাহকারীর কাছ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) পরিবহনে সংযুক্ত করার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছে বলে অভিযোগ এসেছে।
প্রতীকী ছবি

ইসরায়েলভিত্তিক সরবরাহকারীর কাছ থেকে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) পরিবহনে সংযুক্ত করার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছে বলে অভিযোগ এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

হারেৎজ জানিয়েছে, স্পিয়ারহেড সিস্টেম নামে পরিচিত সরঞ্জামটি বিক্রি করে সাইপ্রাসে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান পাসিতোরা। ওপেনকরপোরেটসের তথ্য অনুযায়ী, পাসিতোরা আগে 'উইস্পিয়ার' নামে পরিচিত ছিল, যা একটি ইসরায়েলভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান।

এখনো পাসিতোরার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক অভিজ্ঞ সদস্য তাল জনাথান দিলিয়ান। দিলিয়ানের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তিনি 'ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ২৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, যা একটি অসাধারণ অর্জন। তিনি একটি বিশেষায়িত যোদ্ধা দলের নেতৃস্থানীয় পদে কাজ করেছেন এবং একটি প্রযুক্তি-ভিত্তিক দলের প্রধান কমান্ডারের ভূমিকাও পালন করেছেন।'

হারেৎজ আরও জানিয়েছে, এই সিস্টেমের সঙ্গে নজরদারির সরঞ্জাম ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যার যুক্ত একটি ভ্যান সরবরাহ করা হয়। এটি মোবাইল অথবা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোনে অনুপ্রবেশ করে এবং সেখান থেকে 'এনক্রিপ্ট করা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, ফেসবুক চ্যাট, কন্টাক্ট লিস্ট, কল ও এসএমএস'সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি আধা কিলোমিটার আওতার মধ্যে কাজ করতে পারে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই সিস্টেমের মাধ্যমে রেঞ্জের মধ্যে থাকা (অর্ধ কিলোমিটার) কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে স্পাইওয়্যারের অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব।

ইসরায়েলি পত্রিকার ভাষ্যমতে, এই ভ্যানের মূল্য ৫৭ লাখ ডলার।

এনটিএমসির ২০২১-২২ সালের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা নথিতে অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি ১৯১ কোটি টাকা খরচে 'ভেহিকল মাউন্টেড ডেটা ইন্টারসেপটর-২' কেনার কথা বলা হয়েছে।

নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এটি কেনার কথা ছিল। 

এনটিএমসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সংস্থা।

এ ছাড়াও, ২০২১-২২ অর্থবছরে উল্লেখিত সরঞ্জামসহ অন্যান্য সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৬ কোটি টাকা পৃথক রাখা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে আরও ৩০ কোটি টাকা রাখা হয়।

এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

২০১৯ সালের মে মাসে এনটিএমসি সরাসরি এই সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রথমবারের মতো ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে যায়। এ বিষয়টি ২০১৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের পর গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।

২০২১ সালের ৯ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান তরু গ্রুপের কাছ থেকে ৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা খরচে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। অক্টোবরে মেজর জেনারেল আহসানসহ এনটিএমসির কর্মকর্তারা এই পরিবহনের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে তরু গ্রুপের সঙ্গে গ্রিসে যান।

হারেৎজ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ ও পাসিতোরার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে তরু। তারা আরও জানায়, তরুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একজন ইসরায়েলি নাগরিক, যার নাম আসাফ ইলিয়াস।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অপর একটি ইসরায়েল ভিত্তিক সংস্থা প্রিলাইসিস কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ওপর আড়িপাতার যন্ত্র বিক্রি করেছে।

সূত্র হিসেবে হারেৎজ ২০১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া একটি অর্ডারের কথা উল্লেখ করেছে। পত্রিকাটি আরও জানায়, সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনের উদ্দেশ্যে সাইপ্রাসে যাওয়ার কথা ছিল।

সাইপ্রাসের রপ্তানি নথি থেকে জানা গেছে, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের জুলাইতে ২৯ লাখ ডলার দামের ওয়াগটেইল ওয়াইফাই ইন্টারসেপশন সিস্টেম রপ্তানি করেছে।

Comments